যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়েছেন আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান কাজী সাবিল রহমান (৩৮)।
হোয়াইট হাউসে এক্সিকিউটিভ অফিসের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট ডিভিশনে ইনফরমেশন অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র কাউন্সেলর হয়েছেন কাজী সাবিল।
নিউইয়র্ক সিটিতে জন্মেছেন কাজী সাবিল। তিনি ব্রুকলিন ল’ স্কুলের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ‘ডেমজ’ নামে একটি থিংকট্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বর্ণ ও জাতিগত সাম্য, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, নীতিগত গবেষণার আলোকে গণতান্ত্রিক চেতনায় সর্বসাধারণকে উজ্জীবিত করার অভিপ্রায়ে কর্মরত এ থিংকট্যাংকের মাধ্যমেই সাবিলের প্রতি বাইডেনের দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাইডেন-কমলা ট্র্যানজিশন টিমে আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর গভীর পর্যবেক্ষণ আলোকে সুদূরপ্রসারী কর্মকৌশল গ্রহণের অভিপ্রায়ে কর্মরত ৮টি ওয়ার্কিং গ্রুপের একটির কো-চেয়ার ছিলেন সাবিল। এর আগে হার্ভার্ড ল’ স্কুলে ভিজিটিং প্রফেসর, রুজভেল্ট ইনস্টিটিউটের ফেলো এবং নিউ আমেরিকানের ফেলো ছিলেন। সাবিলের গবেষণার বিষয় হচ্ছে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় আর্থিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি সমগ্র জনগোষ্ঠীকে উন্নয়ন আর গণতন্ত্রের ধারায় সম্পৃক্ত করে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রয়াস। টেকসই উন্নয়নের গতিধারা ত্বরান্বিত করতে কর্মক্ষম মানুষদের উজ্জীবিত করার কাজেও সাবিলের বেশ ক’টি গবেষণাকর্ম ও লেখা রয়েছে।
সাবিল একইসঙ্গে সুশাসনের জন্যে কর্মরত ‘দ্য নিউ প্রেস’র পরিচালনা পর্ষদের মেম্বার, ‘ইউনাইটেড টু প্রটেক্ট ডেমোক্রেসি’ এবং ‘দ্য ন্যারেটিভ ইনিশিয়েটিভ’রও সক্রিয় সদস্য হিসেবে মাঠে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবনমানের উন্নয়নের আলোকে লেখা তার গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য আটলান্টিক, স্ট্যানফোর্ড সোশ্যাল ইনোভেমন রিভিও, বস্টন রিভিউ, ডেমোক্রেসি জার্নাল, দ্য আমেরিকান প্রসপেক্টে।
বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড থেকে সমাজবিজ্ঞানে জেডি এবং পিএইচডি করেছেন সাবিল। রোড স্কলার হিসেবে অক্সফোর্ড থেকে এমএসসি, অর্থনীতি এবং সামাজিক বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন এ মেধাবী।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের পর ২০১৪-২০১৫ সালে নিউইয়র্ক সিটির অন্তর্ভুক্তমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশল সম্পর্কিত স্পেশাল অ্যাডভাইজার এবং নিউইয়র্ক সিটি রেন্ট গাইডলাইন বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন সাবিল। তার বাবা কাজী আফজালুর রহমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্যাডার হিসেবে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে ইকোনমিক কাউন্সেলর হিসেবে চাকরি করেছেন ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ৫ বছর। এরপর তিনি এস্কেপ-বাংলাদেশেও চাকরি করেছেন। ২০০৭ সালে অবসর নিয়ে জাতিসংঘে এস্কেপের রিজিওনাল অফিসে কাজ করেছেন এবং দু’বছর আগে পরিচালক হিসেবে অবসর নিয়েছেন। তার দু’কন্যার একজন আইএমএফের সিনিয়র ইকোনমিস্ট এবং অপরজন থাকেন নিউইয়র্কে। কাজী সাবিলের মা সিলেটের সন্তান সেগুপ্তা রহমান তিন মেধাবী সন্তানের জন্যেই সময় ব্যয় করেছেন প্রবাসে। সাবিলের চাচা কাজী ফজলুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এবং আরেক চাচা কাজী গোলাম রহমানও বাংলাদেশের সচিব ছিলেন।
কাজী সাবিলের এ নিয়োগকে অভিনন্দিত করেছেন বাইডেন-কমলা ট্র্যানজিশন টিমের প্রভাবশালী সদস্য অ্যাম্বাসেডর ওসমান সিদ্দিক, সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ, নিউজার্সির বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও লেখক দেওয়ান শামসুল আরেফিন, নিউ অর্লিন্স ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন উপ-উপাচার্য ও লেখক ড. মোস্তফা সারোয়ার, ফোবানার চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী, পেনসিলভেনিয়া কমিউনিটির লিডার ডা. ইবরুল চৌধুরী এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া।
এর আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান জাইন সিদ্দিক হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র অ্যাডভাইজার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বাইডেন প্রশাসনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন পল্লী উন্নয়ন সচিবালয়ের আন্ডার সেক্রেটারির চিফ অব স্টাফ হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ফারাহ আহমেদ। বাইডেনের ট্র্যানজিশন টিমের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম টিমেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান রুমানা আহমেদ। রুমানা এবং ফারাহ আহমেদ বারাক ওবামার আমলে ভিন্ন দু’টি দায়িত্বে ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২১
এফএম