সিলেট: দেশ-বিদেশে আলোচিত ঘটনা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িস্থ জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহল। ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয় আতিয়া মহলে।
সেই আতিয়া মহলের ঘটনায় দায়েরকৃত ৩টি মামলার মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় সাফাই সাক্ষির দিন ধার্য্য ছিল সোমবার (২৭ এপ্রিল)। এদিন সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মাদ নুরুল আমীন বিপ্লবের আদালতে ৩ আসামিকে উপস্থিত করা হয়। অপর দুই আসামি অভিযানকালে মারা যান।
শুনানিতে জেএমবি সদস্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষাংছড়ি থানার বাইশারীর নুরুল আলমের ছেলে জহুরুল হক ওরফে জসিম (২৯), নুর হোসেনের ছেলে মো. হাসান (২৮) ও জহরুল হক ওরফে জসিমের স্ত্রী মোছা. আর্জিনা ওরফে রাজিয়া (২১) আদালতে হাজির ছিলেন। কিন্তু তারা সাফাই সাক্ষি না দিয়ে তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কালামের মাধ্যমে লিখিত জবানবন্দি দেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক এ মামলার যুক্তিতর্কের আগামী ১৪ মার্চ তারিখ ধার্য্য করেছেন।
এই আদালতের স্পেশাল পিপি মো. মমিনুর রহমান টিটু বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এই মামলায় ৫ জনকে অভিযুক্ত করে। তাদের ২জন আতিয়া মহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন। অপর ৩ আসামি কারাগারে রয়েছে। মামলায় ৩৩ সাক্ষির মধ্যে ২১ জনের স্বাক্ষ্য নিয়ে গত তারিখে আসামিদের উপস্থিতিতে আদালতের বিচারক ৩৪০ ধারায় এই মামলার সাক্ষি ক্লোজ করেছেন।
সোমবার ৩ আসামির সাফাই সাক্ষির দিন ধার্য্য ছিল। কিন্তু আসামিরা স্বাক্ষ্য না দিয়ে তাদের লিখিত জবানবন্দী আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে দাখিল করেছেন। এরপর বিচারক যুক্তিতর্ক শুরুর জন্য আগামি ১৪ মার্চ তারিখ ধার্য্য করেছেন।
২০১৭ সালের ২৩ মার্চ দিনগত রাত থেকে আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। অভিযানে র্যাব, পুলিশ, সোয়াট, সর্বশেষ সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল টানা ১১১ ঘণ্টা অভিযান চালায়। অভিযানকালে ভবনের ৭৮ বাসিন্দাকে জীবিত আতিয়া মহল থেকে জীবিত উদ্ধার করে। এরপর সেনাবাহিনী ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামকরণ করে সফল অভিযান চালায়। অভিযান শেষে আতিয়া মহল থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে একজন নারী ও তিন জন পুরুষ ছিলেন।
এদিকে, অভিযান চলাকালে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের অদূরে জঙ্গিদের পুতে রাখা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটের তৎকালীন প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ও আবু কাওসার চৌধুরীসহ ৭ জন নিহত হন। জঙ্গিবিরোধী অভিযান শেষে ৩টি মামলা দায়ের হয়। মামলাগুলো প্রথমে পুলিশ তদন্ত করে। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়।
২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। এতে জহুরুল হক, তার স্ত্রী আর্জিনা বেগম ও মো. হাসানকে অভিযুক্ত করা হয়।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ২০১৭ সালে পৃথক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে জহুরুল ও তার স্ত্রী আর্জিনাকে এবং কুমিল্লার চান্দিনা থেকে মো. হাসানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তাদেরকে আতিয়া মহলের মামলার গ্রেফতার দেখানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যক্রমকে প্ররোচিত করে নাশকতার পরিকল্পনা, মানুষ হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে, আতিয়া মহল অভিযানকালে বোমা বিস্ফোরণ ও হত্যার ঘটনায় আরও দুটি মামলা হয়। সে দুটি মামলায় ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই চুপিসারে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। প্রতিবেদনে মামলা নিষ্পত্তির আবেদন করা হয়।
এর কারণ হিসেবে বলা হয়, আতিয়া মহলের অদূরে রাস্তায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গি মোশারফ ও নাজিম। তারা দুজনই মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানার অভিযানে মারা গেছে। তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। তবে তারা অজ্ঞাত। তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি তদন্তকালে। আতিয়া মহলে অভিযানের পরপরই মৌলভীবাজারের বড়হাটা ও নাছিরনগরে জঙ্গিবিরোধী অভিযান হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩
এনইউ/এসএ