ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

দুর্নীতিবাজদের পরিবারে ছেলেমেয়ের বিয়ে দেবেন না: জজ আদালতের বিচারক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
দুর্নীতিবাজদের পরিবারে ছেলেমেয়ের বিয়ে দেবেন না: জজ আদালতের বিচারক

ঢাকা: দুর্নীতিগ্রস্ত লোকদের সামাজিকভাবে বয়কট, তাদের সঙ্গে আত্মীয়তা ও তাদের পরিবারে ছেলেমেয়ের বিয়ে না দিতে আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮ এর বিচারক মো. বদরুল আলম ভূঞা। রোববার (৩০ এপ্রিল) অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানের রায় ঘোষণা শেষে উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেন তিনি।

বিচারক মো. বদরুল আলম ভূঞা বলেন, রায় দিয়ে সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব না। দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষদের সমাজ থেকে বয়কট করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্তদের সাথে আত্মীয়তা করবেন না। তাদের সাথে চলাফেরা করবেন না। তাদের কাছে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেবেন না। বিয়ে দিলেও তারা সুখী হবে না। তারা দাওয়াত দিলে যাবেন না। জেনেশুনে দুর্নীতিগ্রস্থ কারও দাওয়াতে যাওয়া মানে রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নেওয়া সমান।

এর আগে দুপুরে দুটি পৃথক অভিযোগে সেলিম প্রধানকে ৮ বছর কারাদণ্ড ও ১১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮’র এ বিচারক।

মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সেলিম প্রধানকে ৪ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাকে আরও ছয় মাসের সাজা ভোগ করতে হবে। এছাড়া জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাকে চার বছর কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের সাজা ভোগ করতে হবে সেলিমকে। রায়ে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তেরও আদেশ দেন বিচারক মো. বদরুল আলম ভূঞা।

রায়ের আদেশে আদালত আরও বলেন, পৃথক দুটি অভিযোগের সাজা একত্রে চলবে। তাই সেলিম প্রধানকে ৪ বছর সাজাই ভোগ করতে হবে।

রোববার রায় ঘোষণার আগে সেলিম প্রধানকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার সাজা পরোয়ানাসহ তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়। এ মামলায় দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল ও আসামিপক্ষে আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম শুনানি করেন।

২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। মামলায় তার বিরুদ্ধে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।

২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি মামলাটি তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান। চার্জশিটে ৫৭ কোটি ৭৯ লাখ ২৮৮ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ২১ কোটি ৯৯ লাখ ৫১ হাজার ১৪৫ হাজার টাকা থাইল্যান্ড ও ইউএসএতে পাচারের অভিযোগ আনা হয়।

ওই বছরের ৩১ অক্টোবর সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬’র বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান। পরে এই আদালতে মামলাটি বদলি হয়ে আসে। বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষে ৩৯ সাক্ষীর মধ্যে ৩৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

সেলিম প্রধানকে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে র‌্যাব-১। এরপর তার গুলশান, বনানীর বাসা ও অফিসে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নগদ ২৯ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে হরিণের চামড়া পাওয়া যায়। ওইদিনই সেলিম প্রধানকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠান।

পরদিন গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মানি লন্ডারিং আইনে দুটি মামলা করে র‌্যাব। ওই মামলাগুলোয় তাকে কয়েকদফা রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করে। এ মামলায়ও তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
কেআই/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।