ঢাকা: পাঁচ বছর আগে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায় শিখা আক্তার নামে এক গৃহবধূকে হত্যার অপরাধে স্বামী রুহুল আমিনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে মরদেহ গুমে সহায়তা করার অপরাধে তার শ্বশুর মনোয়ার হোসেন, শাশুড়ি আছমা বেগম ও দেবর মারুফ খানকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও তিন মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) ঢাকার অতিরিক্ত প্রথম দায়রা জজ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের আদালত এ রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় শেষে সাজার পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর দীপক কুমার দে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নিহত শিখার মা রুনু আক্তার বলেন, আমি শিখার খুনি রুহুলের মৃত্যুদণ্ডে সন্তুষ্ট। তবে এ রায় যেন বহাল থাকে, আপিলে যেন পরিবর্তন না হয়। আমার মেয়ের খুনির ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমার আত্মা শান্তি পাবে না। রুহুল আমিনের মা শিখার শাশুড়ি আছমা বেগম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। কম করে হলেও তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলে আরও খুশি হতাম।
নিহত শিখার বাবা সিরাজ উদ্দিন বলেন, আমার মেয়ে হত্যার রায়ে আমি সন্তুষ্ট। আর যেন যৌতুকের জন্য কোনো মেয়েকে জীবন দিতে না হয়।
আর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শেখ হেমায়েত হোসেন বলেন, পাঁচ বছর আগে যৌতুকের মালামাল পছন্দ না হওয়ায় শিখাকে হত্যা করা হয় এবং মরদেহ গুম করা হয়। এ মামলায় আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে আমরা সন্তুষ্ট।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৬ মে রুহুল আমিনের সঙ্গে বিয়ে হয় শিখার। ৩ আগস্ট বিভিন্ন মালামাল দিয়ে তাকে শ্বশুর বাড়িতে পাঠানো হয়। তবে উপহারের মালামাল দেখে পছন্দ হয় না শিখার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। এজন্য তারা শিখার মা রুনু আক্তারের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এর জেরে রুনু আক্তার তার মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যান। পরদিন স্বামীর সঙ্গে শ্বশুর বাড়ি যান শিখা। রাতে মায়ের সঙ্গে ফোনে অনেকক্ষণ কথা হয় তার। এরপর ৬ আগস্ট শিখার বাবা নাস্তা নিয়ে তার শ্বশুরবাড়ি যান। তখন শিখার শাশুড়ি আছমা বেগম তাকে জানান যে শিখাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শিখার স্বামী রুহুল শিখার বাবাকে জানান, রাতে শিখার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে। শিখার মায়ের সন্দেহ হয়, শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে হত্যা করে মরদেহ হয়তো গুম করেছেন।
পরে রুহুল আমিনের বাড়ির পাশের পুকুর থেকে ৬ আগস্ট বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শিখার মরদেহ পায় পরিবার। এ সময় শিখার গলা ওড়নার কাপড় দিয়ে সিলভারের কলসির সঙ্গে বাঁধা ছিল।
এ ঘটনায় শিখার মা রুনু আক্তার ৬ আগস্ট দোহার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দোহার থানার সেই সময়ের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াসিন মুন্সী।
২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় বৃহস্পতিবার এ রায় দেন বিচারক।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২৩
কেআই/এসআই