ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সাগরু-রুনি হত্যা মামলা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে উপহাস করছে: হাইকোর্ট 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৪
সাগরু-রুনি হত্যা মামলা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে উপহাস করছে: হাইকোর্ট 

ঢাকা: ১২ বছরেও তদন্ত শেষ না হওয়া এবং বিচার শুরু না হওয়ায় ‘সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলাটি ফৌজাদারি বিচার ব্যবস্থাকে ক্রমাগত উপহাস করে চলছে’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।  

মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা নিয়ে এক রিটের রায়ে এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ।

 

গত ১৩ মে দেওয়া ঘোষণা ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি মঙ্গলবার (২ জুলাই) প্রকাশ করা হয়েছে। ৬৫ পৃষ্ঠার ওই রায় লিখেছেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বিচারপতি মো. বজলুর রহমান।  

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।  

ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।  

প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওপর।  

দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)। সেই থেকে প্রায় ১২ বছরে ১০৯ বার সময় নিয়েও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি। সর্বশেষ ৩০ জুন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৪ আগস্ট পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।  

রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, আমাদের দেশে খুনের মামলার বিচারে কখনও কখনও ২০ বছরের বেশি সময় লেগে যায়। যদি এ ধরনের হত্যা মামলায় রাজনৈতিক রঙ দেওয়া হয়, তাহলে এর চেয়েও বেশি সময় লাগতে পারে। উদাহরণস্বরুপ, ২১ বছরের বেশি সময়েও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এফআইআর করা যায়নি। ঘটনার ১২ বছরেও সাগর-রুনি হত্যা মামলার (দুই প্রখ্যাত তরুণ সাংবাদিকের নৃশংস হত্যা) তদন্ত শেষ হয়নি এবং এটি এখনও বিচারের আলো দেখতে পায়নি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মামলাটি ক্রমাগত ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার সঙ্গে উপহাস করে চলেছে এবং অপূরণীয় ক্ষতি করছে, যা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলোর মাধ্যমে কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছিল।  
তবে আদালত এ আরও বলেছেন, এটা সত্য যে বিচার শুরুতে এত বিলম্ব ফৌজদারি মামলা খুবই বিরল।  
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন কারাবন্দির রিটের শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।  

একই সঙ্গে জেল কোডের ৯৮০ বিধি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছিলেন উচ্চ আদালত।  

ওই রুলের উপর চলতি বছরের ১৩ মে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা যাবে না বলে রায় দেন হাইকোর্ট।  

এ মামলায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন । আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।  

রুল শুনানিতে আদালত এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও এস এম শাহজাহান বিশেষজ্ঞ মত নেন।  

রায়ের দিন শিশির মনির বলেছিলেন, রায়ে আদালত বলেছেন-প্রথমত, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি বলা যাবে না এবং তাকে মৃত্যুসেলে রাখা যাবে না। বিচারিক প্রক্রিয়া(ডেথ রেফারেন্স,আপিল ও রিভিউ) ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া (রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন) শেষে কেবল একজন মৃত্যু সেলে বন্দি রাখা যাবে। দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যক্তির অসুস্থতা বা বিশেষ কারণে আলাদা সেলে রাখার আগে তাকে নিয়ে শুনানি করতে হবে। এটি ব্যতিক্রম।  

রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে নতুন জেলকোড তৈরি করছেন। নতুন আইন হচ্ছে প্রিজন অ্যাক্ট। হাইকোর্ট বলছে, রায়ের পর্যবেক্ষণ যেন নতুন আইনে প্রতিফলিত হয়, সেটা বিবেচনা করতে। দুই বছরের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের ক্রমান্বয়ে কনডেম সেল থেকে সরিয়ে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।  

আরও পড়ুন>>>

>>> সাগর-রুনি হত্যা: ১০৯ বার পেছাল তদন্ত প্রতিবেদন

বাংলাদেশ সময়: ০০১৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২৪ 
ইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।