ঢাকা, শুক্রবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতে আলোচিত মাসদার হোসেন মামলার বাদী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতে আলোচিত মাসদার হোসেন মামলার বাদী

ঢাকা: দেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক চেয়ে ১৯৯৪ সালে করা মামলার বাদী জেলা জজ ও জুডিসিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মাসদার হোসেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

এই সময় নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করে আপিল বিভাগ ১৯৯৯ সালে যে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতির হাত ধরে সে রায়ের চূড়ান্ত বাস্তবায়ন হবে বলে প্রত্যাশা করছেন মামলার বাদী মাসদার হোসেন।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মাসদার হোসেন এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানান সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রতি অভিভাষণ দেন। এই অভিভাষণে বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠাসহ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের রূপরেখা তুলে ধরেন। ঘোষিত রূপরেখায় বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রীকরণের চিত্র ফুটে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানান মাসদার হোসেন। এ সময় তিনি প্রধান বিচারপতির কাছে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের রায় চূড়ান্ত বাস্তবায়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

দেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক চেয়ে ১৯৯৪ সালে এই মামলা করেছিলেন জেলা জজ ও জুডিশিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মাসদার হোসেন। তিনি এখন অবসরে রয়েছেন।

এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেন। ওই রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেন আপিল বিভাগ।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ২০১৬ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে ওই বছর ২৮ আগস্ট শুনানিতে বলেন আপিল বিভাগ। এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।

এরপর দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকারের সঙ্গে আদালতের মতপার্থক্যের কারণে ওই বিধিমালা গেজেট প্রকাশের বিষয়টি ঝুলে থাকে। আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এর আগে শৃঙ্খলা বিধিমালার যে খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছিল, ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে দেশ ছাড়েন। ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৬ নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সঙ্গে বৈঠক করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ওই খসড়া নিয়ে মতপার্থক্য দূর হয়েছে। পরে ১১ ডিসেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সরকার।

সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাসদার হোসেন মামলার অন্যতম দরখাস্তকারী সাবেক জেলা জজ মো. মাসদার হোসেন গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতির সাথে সুপ্রিম কোর্টে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

সাক্ষাৎকালে তিনি দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকগণের পক্ষে মাসদার হোসেন মামলা পরিচালনায় অন্যতম আইনজীবী প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এর পিতা প্রয়াত ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের অবদান সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, সম্পূর্ণ স্বপ্রণোদিতভাবে সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে মামলাটি পরিচালনা করে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ যে  অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন, সেই অবদানকে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যরা আজও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মাসদার হোসেন গত ২১ সেপ্টেম্বর বিচার বিভাগের সার্বিক মানোন্নয়নে প্রধান বিচারপতি ঘোষিত রোডম্যাপে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রীকরণের রূপরেখা ফুটে উঠেছে মর্মে প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানান এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, প্রধান বিচারপতির হাত ধরেই বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ চূড়ান্তরূপে  বাস্তবায়ন হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।