ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম থেকে র্যাবকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। মামলার বাদী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির জানান, এটি র্যাব তদন্ত করছিল। রাষ্ট্রপক্ষ একটি আবেদন করেছিল। আদালত শুনানি শেষে র্যাবের কাছ থেকে তদন্ত প্রক্রিয়াটা সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করে, অভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে ৬ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এখন আর র্যাব তদন্ত করতে পারবে না। আশা করা যায় এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর রহস্যের উন্মোচন হবে।
তিনি আরও জানান, কোর্ট বলেছেন, এটা শুধু পরিবারের জন্যই দুঃখজনক নয়, ১২ বছর ধরে একটি মামলার তদন্ত শেষ করা যায় না। এটি জাতির জন্য দুঃখজনক। বিচার ব্যবস্থার জন্য এটা শকিং।
মামলার বাদী নওশের রোমান বলেন, র্যাবকে বাদ দেওয়ায় আমরা খুশি। আসলে র্যাব শুরু থেকেই তদন্তের কিছুই করেনি। প্রথমদিকে আমাদের প্রেশারাইজ করেছে। পরে কোনো কাজই করেনি। স্পেফেসিফিক কোনো বাহিনীকে না নিয়ে বিভিন্ন যারা দক্ষ তাদের দিয়ে যে ট্রাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে এতে আমরা আশার আলো দেখছি। মনে করি এবার কিছু একটা হবে। সরকার আন্তরিক।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এক কর্মকর্তা। একই সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর।
দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।
এদিকে এ মামলার বাদী পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর আইনজীবী শিশির মনিরকে নিযুক্ত করা হয়।
২০১২ সালে হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তার নিয়ে জনস্বার্থে রিট করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। সেই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জারি করা রুলে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, সাগর-রুনি মামলার তদন্ত সঠিকভাবে করা এবং আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য ২০১২ সালে আমরা একটা রিট দায়ের করেছিলাম। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছিল। রুলে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল। এরপর আমাদের পৃথক একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত র্যাবের কাছে চলে যায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এ মামলার চূড়ান্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষের একটি আবেদনের ওপর আজ শুনানি হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪, আপডেট: ১৩৩২
ইএস/আরবি