দেশ কি নারীর জন্য দিনকে দিন আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে? হত্যা, খুন, ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, যৌতুকসহ বিভিন্ন ধরনের নারী নির্যাতনের প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে এমন ধারণা হওয়াই স্বাভাবিক।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের গত ছয় মাসের প্রতিবেদনে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ৬৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পৃথিবীর সব দেশেই মানবাধিকার লংঘনের প্রথম ও প্রধান শিকার হয় নারী। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। গত ছয় মাসে ১৪৮ জন নারীকে হত্যা করা হয়। তবে অনেকের ধারণা এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। কারণ, উল্লিখিত ১৪৮ জন হত্যার রিপোর্ট কোনো না কোনো গণমাধ্যমে এসেছে। আসক কেবল গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই এ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনাসহ মোট ২ হাজার ৭৯ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হত্যা, ধর্ষণ, জখমসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের ঘটনা এর মধ্যে অন্তভূক্ত। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৯২ টি আর গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৯ জন। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জন নারীকে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৬৩ জনকে। কিন্তু এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ, গণমাধ্যমে এসব ঘটনার বেশির ভাগই প্রকাশ পায়না।
যৌতুকের ঘটনাও যেনো বেড়ে চলছে। সমাজের সব শ্রেণী পেশার মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিরাজ করছে এ সামাজিক ব্যাধি। গত ছয়মাসে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৭২ জন নারী। কেবল যৌতুক চেয়েই ক্ষান্ত হননা, যৌতুক আদায়ের জন্য নারীদের ওপর নেমে আসে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে ৯৭ জন নারী।
সমাজে শিক্ষার হার বাড়ছে, কিন্তু কমছেনা যৌতুক কিংবা বাল্যবিবাহের হার। এ সময়ের মধ্যে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছেন ৪০ জন।
এছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের নারী নির্যাতন সামগ্রিকভাব দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে ম্লান করে দিচ্ছে। ফলে, এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। নারী নির্যাতন ও নারী অধিকার বিষয়ক সব প্রাসঙ্গিক আইনকে আমলে এনে বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি নারী নির্যাতনের জন্য দায়ী সামাজিক অনুষঙ্গগুলোকে চিহ্নিত এগুলোকে দূর করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৫