প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থায় নারী অধিকার সুরক্ষা সহজসাধ্য নয়। নারী অধিকারের ক্ষেত্রে আইন ও বাস্তবতার মধ্যে কোনো মিল নেই।
দেশে প্রতিদিন অসংখ্য নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। বাস্তবে যতো ঘটনা ঘটে তার খুব কমই গণমাধ্যমে আসে। নির্যাতনের অধিকাংশ ঘটনাই থেকে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে।
আদালতের দোড়গোড়ায় কিছু ঘটনা আসলেও এজন্য নারীকে ন্যায়বিচারের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। নারীবান্ধব বিচার প্রক্রিয়া নারীকে ন্যায়বিচার পেতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
কার্যকর কোনো সামাজিক কার্যক্রম না থাকার ফলে নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। দেশের প্রচলিত অনেক আইন নারী বান্ধব হলেও আইন বাস্তবায়ন বা বিচার প্রক্রিয়া নারীর জন্য অনেক ক্ষেত্রে সহায়ক না হওয়াতে চুড়ান্তভাবে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না। আমাদের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অনুকূল নয়। নাগরিক হিসেবে এ বিষয়ে আমাদের কোনো সামাজিক উদ্যোগও নেই। নাগরিক উদ্যোগ তথা সামাজিক আন্দোলন না থাকলে নারী অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
প্রতি বছরই নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। মহিলা পরিষদের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় গত বছর ৯৩৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন যার মধ্যে ৯৯ জনকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি। এধরনের নির্যাতনের বেশির ভাগই প্রকাশ পায় না। নারী বা তার পরিবার সামাজিক মর্যাদাহানীর ভয়ে এসব ঘটনা গোপন রাখে। সেই সাথে বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক ধারনার ফলে তারা এ পথে পা বাড়ান না।
সামাজিক অবস্থার কারণে অনেক নির্যাতনই সামনে আসে না। লোক-লজ্জার ভয়ে নারীরা বা তার পরিবার এসব ঘটনা প্রকাশ করতে চায়না। এর পর গ্রাম্য-শালিশ ব্যবস্থা পর্যন্ত গড়ালে শেষ পর্যন্ত সব দোষ নারীর ঘাড়েই বর্তায়। আর আদালত পর্যন্ত যারা আসে, বিদ্যমান বিচার প্রক্রিয়ার ফরে ন্যায় বিচার রয়ে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে।
নারী কোনো শারীরিক নির্যাতনের শিকার হলে তার জন্য বিচার পাওয়া কঠিন। বিচার প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে বহুবার প্রায় একই ধরনের মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ধর্ষণ বা সব ধরনের শারীরিক নির্যাতনের ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। এসব ঘটনার তদন্ত, ডাক্তারি পরীক্ষা, আদালতে শুনানী-সবক’টি পর্যায়েই তাকে কঠিন এক মানসিক শাস্তি মেনে নিতে হয়। অর্থাৎ শারীরিক নির্যাতনের সাথে যোগ হয় মানসিক নির্যাতন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার নারীদের জন্য এক বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব আদালতে কেবল নারীর প্রতি সহিংসতারই বিচার হবে। ২০১৩ সালে আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আমাদের দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশেষ আইন আছে। অন্যান্য আইনেও নারী ও শিশুদের জন্য সহায়ক বিধান রাখা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ আদালতের বিধানও আছে। তবে, নারী নির্যাতনের বিচারের জন্য পৃথক ও বিশেষ আদালত করা হলে নারীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে তা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এসব আদালতের এক ধরনের দক্ষতাও গড়ে উঠবে। এতে স্বল্পতম সময়ে ন্যায়বিচার প্রদান করা সহজ হবে।
নারীর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধে আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গিকারাবদ্ধ। এলক্ষে আমাদের অর্জনও কম নয়। তাই নারী নির্যাতন বন্ধে আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে হবে। এ পথে সব ধরনের অন্তরায় দূর করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৫