রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘৯৫। (১) প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন। (গ) সুপ্রীমকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ লাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকিয়া থাকিলে, তিনি বিচারকপদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হইবেন না’।
১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিষ্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল- নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) ও শৃংখলাবিধান রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সুপ্রীম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে। ]’
গত বছরের ০৩ নভেম্বর হাইকোর্টে রিটটি করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। পরে ২২ নভেম্বর এ রিটের আদেশ স্ট্যান্ড ওভার (মুলতবি) রাখা হয়েছিলো।
পরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
রিট দায়েরের পর ইউনুছ আলী বাংলানিউজকে বলেছিলেন, ‘আদালতে বলেছি-১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে ১১৬ অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব ছিলো সুপ্রিম কোর্টের। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৪র্থ সংশোধনীতে সুপ্রিম কোর্টের পরিবর্তে ওই ক্ষমতা দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতির কাছে। এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’।
‘এছাড়াও সংবিধানের ৯৫ (গ) অনুচ্ছেদে আইন তৈরি সাপেক্ষে বিচারপতি নিয়োগের বিধান থাকলেও সংসদে কোনো আইন ছাড়াই দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এটিও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’।
এদিকে গত বছরের ৩১ অক্টোবর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকের নবম বর্ষপূর্তিতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বাণীতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে’।
‘অন্যদিকে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের ধীরগতির অন্যতম কারণ। ১১৬ অনুচ্ছেদের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি এবং শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে এককভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ‘দ্বৈত শাসনের’ ফলে বহু জেলায় শূন্যপদে সময়মতো বিচারক নিয়োগ প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটে। এবং বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি বেড়ে যায়’।
এরপর গত বছরের ১০ ডিসেম্বর এক সভায় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের ১১৬ এবং ১১৬ (এ) সংবিধানের প্রিন্সিপালসের সাথে কনফ্লিক্ট করে। যার পরিপ্রেক্ষিতেএই দুই বিধান সংবিধানের পরিপন্থী। যা আমাদের পবিত্র বই থেকে অতি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এটা থাকায় আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে বেশবেগ পেতে হচ্ছে। ’
‘আমি কোনো এক অনুষ্ঠানে বলেছিলাম এদেশে দ্বৈত শাসন চলছে, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আইনমন্ত্রী বললেন যে চলে না। প্রধান বিচারপতি আইনের অভিভাবক, সংবিধানের অভিভাবক হয়ে বলছি, এটা যদি না হয়, তাহলে আজকে আমরা বিচারকদের ডিসিপ্লিন রুলস কে করবে? সরকার করবে না আমরা বিচারকরা বরবো? তাদের কন্ট্রোল, বদলি কোনো কিছুই আমরাকরতে পারছি না। তাই এই অসাংবিধানিক প্রভিশনগুলো তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেওয়া হবে বলে আমি আশা করি’।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭
ইএস/এএসআর