জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক এবং বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এ আদেশ দেন।
পাশাপাশি রুলও জারি করেন হাইকোর্ট।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, সদস্য, নির্বাহী পরিচালক ও উপ-পরিচালককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রাজধানীর মিজান মিয়া নামের এক ইলেকট্রিশিয়ান রিটটি দায়ের করেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।
পরে রাশেদুল হক জানান, গত বছরের ৫ মে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ‘পল্লী বিদ্যুতের সংযোগে নিম্নমানের গ্রাউন্ডিং রড’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ১৪ মে ভয়েস অব আমেরিকায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। যাতে বলা হয়, বজ্রপাতের কারণে দুই দিনে ৫৬ জন মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘এ বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে গ্রাউন্ডিং রড বড় ধরনের ভূমিকা রাখে’।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পল্লীবিদ্যুৎ সংযোগে নিম্নমানের গ্রাউন্ডিং (মাটির নিচে ব্যবহৃত) রড ও তার ব্যবহার বেড়েছে। এর ফলে বজ্রপাতে প্রাণহানি ও বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা নষ্টসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অকেজো গ্রাউন্ডিং রডের কারণে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় দুর্ঘটনাও ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাহকদের অসচেতনতা, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিগুলোর (পবিস) নজরদারিতে দুর্বলতা ও গাফিলতি এবং গ্রাম্য বিদ্যুৎ মিস্ত্রিদের (ইলেক্ট্রিশিয়ান) দুর্নীতির কারণেই গ্রাউন্ডিং রডের যথাযথ মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না’।
‘জানা গেছে, দুই বছর আগে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় রড গ্রাহকদের মাধ্যমেই কেনা বা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। ২০১৪ সালের মার্চের ওই সিদ্ধান্তের পর বোর্ডের অধীনে থাকা পবিসগুলো গ্রাউন্ডিং রড সরবরাহ করছে না। গ্রাহকরা নিজেরাই খোলা বাজার থেকে প্রয়োজনীয় রড ও তার সংগ্রহ করে। এতে আরইবি বা পবিসের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে অসচেতনতায় ও অর্থ বাঁচাতে গ্রাহকরা প্রায়ই নিম্নমানের রড কিনে থাকেন’।
‘আরইবির একজন প্রকৌশলী জানান, বৈদ্যুতিক মিটারের সঙ্গে গ্রাউন্ডিং রড স্থাপন করা হয়। পল্লীবিদ্যুতের প্রতি আবাসিক সংযোগের জন্য সাধারণত আট ফুট দীর্ঘ গ্রাউন্ডিং রড দরকার হয়। ১৬ মিলিমিটার পুরুত্বের রডটি জিঙ্ক দিয়ে ঝালাই (গ্যালভানাইজ) করা হয়। এর সঙ্গে ১০ ফুট দীর্ঘ ১০ গেজি জিআই তার থাকে। সব মিলিয়ে এর ওজন অন্তত চার কেজি হতে হয়। বোর্ড থেকে এ স্পেসিফিকেশন (সবিস্তার বিবরণী) রক্ষা করে সংযোগ দিতে পবিসগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে’।
‘কিন্তু সরেজমিন পরিদর্শন এবং বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পল্লী বিদ্যুতের অধিকাংশ সংযোগেই এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। সম্প্রতি আরইবি এ বিষয়ে সতর্ক করে পবিসগুলোতে একাধিক চিঠি দিয়েছে। বেশ কয়েকটি পবিস স্থানীয় দোকানদারকে যথাযথ মানসম্পন্ন গ্রাউন্ডিং রড বিক্রি করতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও দিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। রডে জিঙ্কের পরিবর্তে রং মাখিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। সঙ্গে তারও দিচ্ছে নিম্নমানের’।
‘এদিকে যথাযথ মানসম্মত গ্রাউন্ডিং রড ব্যবহার না করায় বজ্রপাতে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও ভয়াবহতা বাড়ছে। গত রবিবারের ঝড়ের পর রংপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ঘরে আগুন লাগে এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকা টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, বাতিসহ বিভিন্ন পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। গত এপ্রিলেই হবিগঞ্জে একই ধরনের দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকটি ঘর পুড়ে যায় ও অন্তত সাতজন গুরুতর আহত হয়। গত বছর সিরাজগঞ্জে একটি বসতবাড়ি ও চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে যায়। এভাবে নিম্নমানের গ্রাউন্ডিং রডের কারণে মানুষের জীবন ও সম্পদ ঝুঁকিতে পড়েছে। আবার এ কারণে বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং আরো বড় ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে’।
রাশেদুল হক বলেন, এসব সংবাদ যুক্ত করে রিট করার পর আদালত প্রয়োজনীয় আদেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
ইএস/এএসআর