ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সাত খুনের ডেথ রেফারেন্স-আপিলের রায় পিছিয়ে ২২ আগস্ট

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
সাত খুনের ডেথ রেফারেন্স-আপিলের রায় পিছিয়ে ২২ আগস্ট মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি নূর হোসেন (ফাইল ফটো)

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের দুই মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় পিছিয়ে আগামী ২২ আগস্ট পুনর্নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট।

রোববার (১৩ আগস্ট) আলোচিত এ মামলার রায়ের দিন ধার্য ছিল। বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ তা ০৯ দিন পিছিয়ে দেন।

পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাত খুনের মামলার দু’টি ডেথ রেফারেন্সের রায় দেওয়া হবে। আমরা মনে করি, এ দু’টি মামলা চাঞ্চল্যকর মামলা। ন্যায়বিচারের স্বার্থে হয়তো বিচারপতিরা একটু সময় নিয়েছেন’।

রায় শুনতে হাইকোর্টে এসেছিলেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী মামলার বাদিনী বর্তমান কাউন্সিলার বিউটি বেগম সাংবাদিকদের কাছে বিচারিক আদালতের রায় বহাল থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

নজরুলের সঙ্গে নিহত তার বন্ধু তাজুল ইসল‍ামের বাবা বলেন, ‘নিন্ম আদালতের রায়ে আমরা সুবিচার পেয়েছি। উচ্চ আদালতেও সুবিচার পাবো বলে আশা করছি’।

গত ১৬ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর সাত খুনের দুই মামলার রায়ে নূর হোসেন ও র্যাবের বরখাস্তকৃত তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত। ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ জনের মধ্যে গ্রেফতার ও আত্মসমর্পণ করে কারাগারে থাকা  ২০ জন নিয়মিত ও জেল আপিল করেছেন। তারা হচ্ছেন- প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়্যব আলী,  কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর, সৈনিক আবদুল আলীম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া ও আরওজি-১ এ বি মো. আরিফ হোসেন এবং নূর হোসেনের ৬ সহযোগী মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, আবুল বাশার, রহম আলী ও জামাল উদ্দিন সরদার।

পলাতক যে ৬ আসামি আপিল করেননি, তারা হলেন- র্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ ও সৈনিক তাজুল ইসলাম এবং নূর হোসেনের তিন সহযোগী ভারতে গ্রেফতারকৃত সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান।

হাইকোর্টে এসেছিলেন নিহত নজরুল ইসলামের পরিবার।  ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদলবিচারিক আদালতের রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া ৯ জনও র্যাবের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ও সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল (পরে এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে নৌ-থানায় কর্মরত) হাবিবুর রহমানকে ১৭ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল বাবুল হাসান, কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন ও সিপাহী নুরুজ্জামানকে ১০ বছর এবং এএসআই বজলুর রহমান ও হাবিলদার নাসির উদ্দিনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

তাদের মধ্যে পলাতক দু’ জন হচ্ছেন- র্যাবের চাকরিচ্যুত কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান ও এএসআই কামাল হোসেন।

সব মিলিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৫ জনের মধ্যে কারাগারে আছেন ২৭ জন আর পলাতক ৮ জন।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের তিনদিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনায় নিহত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম।

সাত খুনের ঘটনায় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহকর্মী হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

দু’টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম একসঙ্গে শেষ করে রায় দেন বিচারিক আদালত।

এরপর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা মামলার সব নথি বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। এরপরই বিজি প্রেস পেপারবুক প্রস্তুত করে গত ০৭ মে হাইকোর্টে পাঠায়।

গত ২২ মে থেকে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়। ৩৩ কার্যদিবসে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে গত ২৬ জুলাই রায়ের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
 
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ মান্নান্ন মোহন ও জাহিদ সরওয়ার কাজল এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, এস এম শাহজাহান প্রমুখ।
 
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অর্থাৎ, বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখার আরজি জানান। তিনি বলেন, এ ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। র‌্যাবের তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মাসুদ রানা ও আরিফ হোসেন পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
ইএস/এমএএম/এএসআর

** সাত খুনের ডেথ রেফারেন্স-আপিলের রায়ের অপেক্ষা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।