ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জামিন জালিয়াতিতে কারামুক্ত দুর্ধর্ষ অপহরণকারী মিজান!

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
জামিন জালিয়াতিতে কারামুক্ত দুর্ধর্ষ অপহরণকারী মিজান!

ঢাকা: জামিন জালিয়তি করে কারাগার থেকে বের হয়ে গেছেন শিশু আবীর (৮) অপহরণ ও ১০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবির মামলার প্রধান আসামি মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মাতুব্বর।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জয়শ্রী সমদ্দার মামলাটিতে আসামি মিজান মাতুব্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলার ১২ আসামির মধ্যে ৭ জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।

তারা হলেন- রেজাউল করিম, নজরুল ইসলাম, মশিউর রহমান, আলীম হোসেন চন্দন, সজীব আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ইকবাল হোসেন শুভ। দুই আসামি জহির উদ্দিন বাবর ও শাহ মো. অলি উল্লাহ জামিনে আছেন। বাকি দু’জন কাওসার মৃধা ও রেজা মৃধা পলাতক।

মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর মামলাটির অভিযোগ (চার্জ) গঠনের দিন ধার্য ছিল। কারাগারে আটক আট আসামির সাতজনকে ওইদিন কারা কর্তৃপক্ষ আদালতে হাজির করেন।

কিন্তু মামলার প্রধান আসামি মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মাতুব্বরকে আদালতে হাজির না করা হলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপারকে স্বশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শাতে বলেন ট্রাইব্যুনাল। মিজান ছাড়া বাকি ১১ আসামির বিরুদ্ধে ওইদিন অভিযোগ গঠন করা হয়।

সোমবার লিখিত জবাব নিয়ে আদালতে স্বশরীরে হাজির হন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরাণীগঞ্জের সিনিয়র জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির। তার বক্তব্যেই বের হয়ে এসেছে জামিন জালিয়াতির বিষয়টি।

সিনিয়র জেল সুপার তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ৩০ আগস্ট ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ৪৩০ নম্বর স্মারকমূলে আদালতের পত্রবাহক তৈয়বের মাধ্যমে আসামি মিজানের জামিননামা ও মুক্তির আদেশ পায় জেল কর্তৃপক্ষ। ওইদিনই তাকে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

কিন্তু গত ১০ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে ফোন দিয়ে মিজানকে হাজির না করার বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তারা ওইদিনই জানতে পারেন যে, মিজানের জামিনই হয়নি।

জেল সুপারের পক্ষের আইনজীবী মোখলেছুর রহমান বাদল বাংলানিউজকে জানান, আসামিপক্ষে দাখিল করা জামিননামায় আইনজীবীর স্বাক্ষর ও সদস্য নম্বর জাল। উল্লেখিত নম্বরে ওই নামের কোনো আইনজীবীই নেই।

মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৫ সালের মে মাসে ১০ কোটি টাকা মুক্তিপণের দাবিতে শিশু আবীরকে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার স্টাফ রোড এলাকার ফ্লাইওভারের নিচ থেকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। আবীরের বাবা ২ কোটি টাকা দিতে রাজি হয়ে একাধিক ব্যাংকের হিসাবে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও নগদ ২৭ লাখ টাকা দেন। টাকা পেয়ে আবীরকে ছেড়ে দেন অপহরণকারীরা।

এ ঘটনায় আবীরের মামা এনায়েত উল্লাহ ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করলে আসামিদের গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

মামলার তিন আসামি মিজান, রেজাউল ও নজরুল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। শিশু আবীরও তার অপহরণের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেয়।

ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশের পরিদর্শক কবির হোসেন ১২ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।

বাংলাদেশ সময়:  ১৪০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।