ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বাচ্চাদের স্মার্টফোন দেয় কেন?

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৭
বাচ্চাদের স্মার্টফোন দেয় কেন? সুপ্রিম কোর্ট

ঢাকা: অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘বাচ্চাদের স্মার্টফোন দেওয়া হয় কেন? ম্যাচিউরড তথা ২২ বা ২৩ বছরের আগে স্মার্ট ফোন দেওয়া উচিত নয়’।

ডেথ গেমস্‌ হিসেবে পরিচিত  ব্লু হোয়েলসহ আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী এ জাতীয় সকল গেমস্‌ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
 
সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিটের শুনানি হয়।


 
আদেশে ডেথ গেমস্‌ হিসেবে পরিচিত  ব্লু হোয়েলসহ আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী এ জাতীয় সকল গেমসের গেটওয়ের লিঙ্ক ও অ্যাপলিকেশন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ছয়মাসের জন্য গেমসের লিংক বন্ধ ছাড়াও যারা এসব গেমসে আসক্ত তাদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি এবং আসক্তদের কাউন্সিলিং করতে বিশেষজ্ঞ টিম গঠনের নির্দেশও দেন। এছাড়াও রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মোবাইল ফোন অপারেটরদের রাত্রিকালীন বিশেষ ইন্টারনেট অফার ছয়মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। রিট আবেদনের বিবাদীদেরকে এসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রিটকারীরা হচ্ছেন- মোবাইলে ব্লু হোয়েলের মরণনেশার ফাঁদে পড়ে আত্মহত্যাকারী রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণার (১৪) বাবা অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্ধন এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওসার ও ব্যারিস্টার নূর আলম সিদ্দিক।     

আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী হুমায়ূন কবির পল্লব।
 
শুনানির শুরুতে অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির পল্লব বলেন, ‘ব্লু হোয়েল গেমস্‌ নিয়ে একটি রিট আবেদন’। জবাবে আদালত বলেন, ‘পেপারে দেখছি’।

পল্লব বলেন, ‘এ বারের তিন আইনজীবী রিট করেছেন। যাদের মধ্যে একজনের মেয়ে (স্বর্না) এ গেমস্‌ খেলে আত্মহত্যা করেছে’।
এ সময় আদালত বলেন, ‘পেপারে এগুলো নিয়ে নিউজ আসছে। কার মেয়ে, বয়স কতো, কোন স্কুলে পড়তো?’

এ সময় স্বর্ণার বাবা সুব্রত বর্ধন দাঁড়িয়ে বলেন, ‘মেয়ে ক্লাস এইটে পড়তো। ১৪ বছর বয়স। হলিক্রস স্কুলে। রোল নম্বর ছিলো এক’। স্বর্ণার ছবিও আদালতকে দেখান সুব্রত বর্ধন।

আদালত বলেন, ‘ভালো স্কুল। মেধাবী মেয়ে। মেয়ে এগুলো করছে, খেয়াল করেননি? জবাবে সুব্রত বলেন, ‘আমরা বিষয়টি বুঝতে পারিনি। ঘটনার আগে সে সবার সঙ্গে নবমীতেও গেছে। এরপরে যে কি হয়ে গেলো...’

আদালত বলেন, ‘ভেরি স্যাড, ভেরি স্যাড। ইট ক্যান নট বি রিপেয়ার্ড। কবে আত্মহত্যা করেছে?’ জবাবে সুব্রত বলেন, ‘০৫ অক্টোবর’।

এ সময় আইনজীবী পল্লব বলেন, ‘দিস ইজ এন ইনসিডেন্ট’। তখন আদালত একটি গানের লাইন বলেন, ‘যার চলে যায়, সেই বোঝে হায় বিচ্ছেদের কি যন্ত্রণা......’
 
পল্লব বলেন, ‘ইন্টারনেটের ডার্ক ইফেক্ট হচ্ছে এগুলো। শুধু স্বর্ণাই নয়, এরপর রংপুরে এক আইনজীবীর মেয়ে ও বরিশালেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সবাই সুসাইডাল নোট দিয়ে গেছে’।

এ সময় স্বর্ণার সুসাইডাল নোট আদালতে উপস্থাপন করেন তার বাবা।
 
পল্লব বলেন, ‘নীল তিমি মরার সময় যেমন বিচে চলে (সমুদ্রের কিনারে) আসে। তেমনি এটাও একই রকম। এ পারসেপশন থেকে সুসাইড নোট’।
 
ব্লু হোয়েল গেমসের বর্ণনা দিতে গিয়ে পল্লব বলেন, ‘২০১৩ সালে এ গেমস্‌টির উদ্ভাবন করা হয়। রাশিয়ার এক যুবক এটি বের করে। পরবর্তীতে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে নেওয়া হয়। তার ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। রাশিয়ার সংসদে এর বিরুদ্ধে আইন হয়েছে। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৩০০ জনের মতো আত্মহত্যার খবর এসেছে। এর মধ্যে ১৫০ জন রাশিয়ায়। যে একবার ঢোকে সে আর বের হতে পারে না। এখানে ৫০ দিনের চ্যালেঞ্জ দেয়’।

‘এ গেমসের কিউরেটর বা মাস্টাররা টিনএজারদের ফেসবুকে সিলেক্ট করেন। এরপর অ্যাপস্‌ পাঠান। কেউ অ্যাকসেপ্ট করলে তারা তার সব কিছু জেনে নেন এবং একটি পাসওয়ার্ড দেন। শুরুর দিকে মাস্টাররা অনেক আনন্দদায়ক বিষয়ে আকৃষ্ট করেন ব্যবহারকারীদের। কিন্তু পরবর্তীতে মাস্টার ব্যবহারকারীকে কিছু কাজ দেন, সেগুলোই সমস্যার। ভোর চারটায় কবরস্থানে গিয়ে সেলফি দিতে বলেন, রাত তিনটায় ছাদের কার্নিশে গিয়ে সেলফি দিতে বলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এ গেমসের লাস্ট স্টেজ হলো আত্মহত্যা সংঘটন করা (কমিট টু সুসাইড)। গেমস্‌ না খেললে থ্রেট দেওয়া হয়। দিস ইজ নট এ গেমস্‌। ইট ইজ ডেথ ট্র্যাপ’।
 
আদালত বলেন, ‘অ্যাবসুলিউটলি। কারণ, যারা এটা ব্যবহার করে, তারাতো ম্যাচিউরড না। বিটিআরসি কি এটি ব্লক করতে পারবে?’

জবাবে পল্লব বলেন, ‘তারা করেনি। কেন করেনি, সেটি জানি না’। এরপর দৈনিক আমাদের সময়ের একটি সম্পাদকীয় পড়ে শোনান আইনজীবী।
 
আদালত বলেন, ‘অভিভাবকদেরও দায়-দায়িত্ব আছে। বাচ্চাদের স্মার্টফোন দেয় কেন? ম্যাচিউরড না হওয়া পর্যন্ত স্মার্টফোন দেওয়া উচিত না। সেটা ২২ ও ২৩ বছর হতে পারে’।
 
জবাবে পল্লব বলেন, ‘এসব গেমস্‌ রাতে খেলে। আর মোবাইল অপারেটররাও রাতে বিভিন্ন অফার প্যাকেজ দেয়। রাত হচ্ছে ঘুমানোর সময়। তারা কেন রাতে দেবে? তরুণদের জেগে রাখার জন্য এ অফার দিচ্ছে’। শুধু এ গেমস্‌ই নয়, এ রকম আরও দশটি গেমস্‌ আছে। যেগুলো ক্ষতিকর’।

এরপর আদেশ দেন হাইকোর্ট।
          
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৭
ইএস/এএসআর
**
ব্লু হোয়েলের লিঙ্ক বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের
** মোবাইলে রাতের ইন্টারনেট অফার বন্ধের নির্দেশ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।