ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ভদ্রা ও হরি নদীর জায়গা দখলে হাইকোর্টে স্থিতাবস্থা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১
ভদ্রা ও হরি নদীর জায়গা দখলে হাইকোর্টে স্থিতাবস্থা হাইকোর্ট

ঢাকা: খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদীর জায়গায় মাটি ভরাট/দখল/নির্মাণ/বাঁধ/ইটভাটা পরিচালনার ওপর তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো.মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

১২ ফেব্রুয়ারি ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে ‘ইউনাইটেড দে কিল রিভার্স’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট করা হয়।

জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ এর পক্ষে ২২ ফেব্রুয়ারি এ রিট করা হয়।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) নিশ্চিত করেছেন রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

তিনি জানান, আদালত খুলনা জেলার ডুমুরিয়ায় উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদীর জায়গায় মাটি ভরাট/দখল/নির্মাণ/বাঁধ/ইটভাটা দেওয়া বন্ধ ও অপসারণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং মাটি ভরাট/দখল/নির্মাণ/বাঁধ/ইটভাটা অপসারণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

রিটের বিবাদীরা হচ্ছেন— এলজিআরডি, পানি সম্পদ, পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজি, পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা, ডিসি ও এসপি খুলনা, খুলনা-৫ এর সংসদ সদস্য, ডুমুরিয়ার সদর উপজেলা চেয়ারম্যানসহ মোট ১৪।

মনজিল মোরসেদ জানান, আদালত রুল জারির পাশাপাশি তিন মাসের জন্য খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদীর জায়গায় মাটি ভরাট/দখল/নির্মাণ/বাঁধ/ইটভাটা পরিচালনার পর স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার পরিচালক, ডিসি ও এসপি খুলনা, পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার এস্কিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, উপজিলা নির্বাহি অফিসার, এসিল্যান্ড এবং ওসিকে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

এছাড়াও খুলনার জেলা প্রশাসক ও ডুমুরিয়ার এসিল্যান্ডকে সিএস/আরএস অনুসারে জরিপ করে ভদ্রা ও হরি নদীর সীমানা নির্ধারণ করে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার একসময়ের প্রবাহমান নদী ভদ্রা এখন একটি সরু খালে পরিণত হয়েছে। এর জন্য দায়ী নদীর জমি দখলকারী ইটভাটা, যেগুলো চালাচ্ছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নয়টি ইটভাটা চিহ্নিত করেছে খুলনার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি)। এর মধ্যে খারনিয়া ইউনিয়নের ভদ্রা নদীর তীরের চার কিলোমিটার দীর্ঘ জায়গা দখল করে রাখা ইটভাটাগুলোও রয়েছে। যে ইটভাটাগুলোর মালিকদের মধ্যে একজন সংসদ সদস্য (এমপি), উপজেলার ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও রয়েছেন।

বিডব্লিউডিবি খুলনার তালিকায় ভদ্রা ও হরি নদীর তীরবর্তী জায়গায় থাকা মোট ১৮টি ইটভাটার নাম রয়েছে। বিডব্লিউডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ভদ্রার দুই পাড়ে এবং শোলমারী ও হরি নদীর তীরবর্তী নিচু জায়গায় আরও ইটভাটা স্থাপন করায় তালিকায় আরও নাম যোগ হবে।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টার সরেজমিনে গিয়ে দেখেছে, ইটভাটার মাধ্যমে এসব দখলের কারণে ভদ্রার শাখা নদী সালতাসহ সংযুক্ত অন্তত তিনটি খালের স্রোতের প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে খারনিয়া ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের সংবাদদাতা দেখেছেন, এক সময় ৫০০ মিটার প্রশস্ত ভদ্রা নদী বর্তমানে সংকুচিত হয়ে ১৬-৩০ মিটার হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শীতে নদীর প্রবাহ কমে যাওয়ায় এর দুই পাড় থেকে দখলদাররা খননকারী যন্ত্র দিয়ে মাটি তুলছেন। তারা সেই মাটি ইট বানাতে ব্যবহার করেন। যদিও নদীর জমি দখল করা অপরাধমূলক কাজ, তা সত্ত্বেও দখলদাররা গত ১২ বছর ধরে এসব ইটভাটা চালিয়ে আসছে। ইটভাটা মালিকদের কাছে নোটিশ পাঠানো ছাড়া আর তেমন কোনো ব্যবস্থাই এখন পর্যন্ত নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১
ইএস/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।