ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘তাহলে তো দেশে কোর্ট-কাছারি থাকার দরকার নেই’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২২
‘তাহলে তো দেশে কোর্ট-কাছারি থাকার দরকার নেই’

ঢাকা: রাজধানীর মগবাজারে আদ-দ্বীন হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলায় আপিল বিভাগে শুনানির জন্য সময় নেওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।

রোববার (৩ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষে সময় চাইলে এ উষ্মা প্রকাশ করেন।

আদালতে আপিলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী। রিটকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান বুলু।

মামলার নথি অনুসারে, ১৯৪৫ সালে ওই জমির মালিক বীরেন্দ্রনাথ রায় তার সাড়ে ১৯ কাঠা জমির আম মোক্তার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দিয়ে যান স্থানীয় সিরাজুল হককে। এর ২০ বছর পর ১৯৬৫-৬৬ সালে এ জমির খাজনা দিয়ে নিজের নামে নামজারি (মিউটেশন) করান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক। কিন্তু পরবর্তীতে খাজনা না দেওয়ায় ১৯৯৯ সালে সরকার এ জমির খাজনা দাবি করে মামলা করে। এ মামলার পর ওই বছরের ২৫ জুলাই সিরাজুল হক ২ হাজার ৭৯২ টাকা খাজনা পরিশোধ করে জমির ভোগ-দখল করতে থাকেন।

২০০৮ সালে মারা যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক। এরপর এ জমির খতিয়ান সংশোধন চেয়ে মামলা করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে ২০০৯ সালের ২৩ জুন রমনা ভূমি অফিস এই জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ পাঠায়। এ নোটিশ পাঠানোর পর ওই বছরের ১৫ নভেম্বর রমনা ভূমি অফিস থেকে আরেকটি নোটিশ পাঠানো হয় জমির বীরেন্দ্রনাথ রায়কে।

ওই নোটিশে বলা হয়, ‘বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড-এর অনুকূলে জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম এবং সদস্যদের আবাসন সুবিধার জন্য স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এবং জনস্বার্থে প্রয়োজন। ’

নোটিশে জামির দাম উল্লেখ করা হয় ২ কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার ৫২৯ টাকা।

এ নোটিশের পরপরই জমি অধগ্রহণের গেজেটও জারি করা হয়। গেজেট জারির কিছুদিন পর জমির ভোগ-দখলকারী সিরাজুল হকের পরিবারকে উচ্ছেদ করে প্রশাসন।

ওই গেজেটর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে সিরাজুল হকের স্ত্রী মালেকা সিরাজ ও তার পাঁচ সন্তান রিট আবেদন করেন। ওই রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১১ সালে গেজেট বাতিল ও জমি অধিগ্রহণ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি (লিভ টু আপিল) চেয়ে ওই বছরই আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

তখন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা দেন। পরে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে ২০১২ সালে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ছয় মাস ধরে মামলাটি আপিল বিভাগের কার্য তালিকায় থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি করেনি। এর মধ্যে রিটকারী পক্ষ শুনানি করেছেন।

রোববার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শুনানির জন্য ফের সময় চাইলে আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘দশ বছরেও একটা মামলার প্রস্তুতি নিতে পারেন না, এটা লজ্জার। এটা হতে পারে না। তাহলে আমাদের এখানে (এজলাসে) বসে থেকে লাভ কি!’

আদালত বলেন, ‘যাদের ভিটে মাটি আগে তো তাদের কথা ভাবতে হবে। একজনের ভিটে মাটি নিয়ে যাবেন, তা তো হতে পারে না। তাহলে তো দেশে কোর্ট-কাছারি থাকার দরকার নাই। ’ 

আদালত আরও বলেন, ‘এভাবে সময় নিলে তো সম্পত্তিতে জনগণের অধিকার থাকে না। জনগণের সম্পত্তির সুরক্ষাই যদি না থাকে, তাহলে আদালত থেকে লাভ কি?

এরপর আদালত মামলাটির শুনানি নট টুডে (আজ নয়) করেন।

পরে সিরাজুল হকের পরিবারের আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান জানান, ২০১২ সালে আপিল করার পর এখন পর্যন্ত শুনানি করেনি রাষ্ট্রপক্ষ। গত বছর আগস্টে প্রধান বিচারপতিকে সব বলার পর আপিলটি শুনানির জন্য কার্য তালিকায় আসে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ বারবার সময় নেওয়ায় আর শুনানি হচ্ছিল না। অবকাশের দুই সপ্তাহ আগে সর্বশেষ সময় নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। আজকে আবার সময় নিতে এলে আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২২
ইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।