ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

১৬ বছর সংগ্রাম করেছি, রায়ে সন্তুষ্ট: ড. তাহেরের স্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২২
১৬ বছর সংগ্রাম করেছি, রায়ে সন্তুষ্ট: ড. তাহেরের স্ত্রী

ঢাকা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় ২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী সুলতানা আহমেদ।  
 
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) আপিল বিভাগে অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখার পর এমন মন্তব্য করেছেন তিনি ।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক ড. তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ১৬ বছর ধরে এর জন্য অনেক সংগ্রাম করেছি। অনেক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছি। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। রায় কার্যকর হলে পরিপূর্ণভাবে সন্তুষ্ট হবো।

হত্যাকাণ্ডের সময়কার ঘটনা উল্লেখ করে সুলতানা আহমেদ বলেন, খুনির যে কার্যক্রম, সে যা করেছে আমাদের সঙ্গে চিন্তার বাইরে। সে সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মস্তিষ্কে আমার বাড়িতে, আমার অনুপস্থিতিতে, আমার ড্রয়িং রুমে গিয়ে সোফায় বসে আমার স্বামী হত্যার পরিকল্পনা করেছে। আমর বাড়ির জিনিসপত্র তারা ব্যবহার করেছে। বিনা অনুমতিতে কারো বাড়িতে প্রবেশ করা নিষেধ। সে শিক্ষা সে পায়নি। এ শিক্ষা পেতে হয় পরিবার থেকে। সবচেয়ে বড় কথা সাজা কার্যকর হোক।

এ রায়ে আদালতে উপস্থিত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভী ও মেয়ে শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

এর আগে সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ে খালাস চেয়ে আসামিদের আপিল এবং যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করা হয়।  

ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
  
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুইজন হচ্ছেন- নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে অধ্যাপক ড. এস তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ এবং মেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ১৬ মার্চ শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৫ এপ্রিল দিন রেখেছিলেন আপিল বিভাগ।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। সঙ্গে ছিলেন, সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নুরুল ও মোহাম্মদ সাইফুল আলম ।

আসামি পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ এ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।  

এই হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত ৪ জনকে ফাঁসির আদেশ ও ২ জনকে বেকসুর খালাস দেন। খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত ২ আসামি হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।

০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।

শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রাবির ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।  

এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১২০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২২
এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।