ঢাকা: বিশ্বমানের টেবিলওয়্যার, টাইলস, সেনিটারি ওয়্যারসহ সব ধরণের সিরামিক পণ্য তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। উৎপাদিত সিরামিক চাহিদার প্রায় ৮০ ভাগ পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
দেশিয় শিল্পের সুরক্ষায় মানহীন সিরামিকের বাড়তি শুল্ক আরোপ করা উচিত বলে জানিয়েছে গবেষক ও বাংলাদেশ টাইলস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন। প্রয়োজনের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক বসানোর কথাও বলছে সংগঠনটি। ডলার সংকটের এই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করতে সিরামিকের মতো পরিণত শিল্পে আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন বলেও তারা মনে করে।
সিরামিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, নান্দনিক নকশা আর বৈচিত্র্যের কারণে কেবল দেশেই নয়, বিশ্ববাজারেও বাংলাদেশের সিরামিকের চাহিদা বাড়ছে। দেশের বাজারে এখন বিশ্বমানের টেবিলওয়্যার, টাইলস, সেনেটারি ওয়্যার তৈরি করছে।
মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন টাইলস বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে সিরামিকের তৈরি দেশিও টাইলস। যদিও এসবের পাশাপাশি বিদেশি টাইলসের আধিপত্য কম নয়।
এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, আমদানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এদেশের উদ্যোক্তারা। একইসঙ্গে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। বাংলাদেশের টাইলসের মান অন্য দেশের চেয়ে ভালো। ক্রেতারা বাংলাদেশি সিরামিক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে স্বস্তি বোধ করেন।
দেশিয় উদ্যোক্তারা বলছেন, বাংলাদেশেই এখন প্রতি বছরও উৎপাদন বাড়ছে। দেশের ৩০টি প্রতিষ্ঠান আছে যারা আন্তর্জাতিক মানের টাইলস উৎপাদন করছে। আরও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান পাইপলাইনে আছে। আমাদের আর আমদানি করা লাগবে না। একই পণ্য দেশি যেটা কিনতে ১২৫ টাকা লাগছে, চায়নাটি কিনতে ২৩৫ টাকা লাগছে। শুধু ভ্যাট ট্যাক্স সংশ্লিষ্ট কারণে দাম বেশি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সিরামিক পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক মানুফাক্টারার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সিরামিকের বাজার বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার। দেশে প্রায় ৭০টি সিরামিক প্রতিষ্ঠান আছে। এ সব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ সব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত সিরামিক দেশের চাহিদার ৮০ ভাগ পূরণ করে। দেশি বাজারের চাহিদা পূরণ করে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা সিরামিক পণ্য রপ্তানি করে থাকে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা আছে ৮০০ কোটি টাকার।
এ মুহূর্তে সিরামিকের দেশিয় শিল্প সুরক্ষা প্রয়োজন বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। এটা করা গেলে দেশের কারখানাগুলো যেমন সুরক্ষা পাবে, বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করা সম্ভব। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ মূহূর্তে বাংলাদেশে যে পরিমাণ সিরামিক পণ্য উৎপাদন হচ্ছে ও চাহিদা আছে; তাতে সিরামিক আমদানি করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা জানতে পেরেছি, চীন থেকে নিম্নমানের সিরামিক অ্যান্টি ডাম্পিং করে বিক্রি করছে। দেশিয় শিল্পের বিকাশ ও আমদানি নিরুৎসাহিত করতে দেশে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের প্রয়োজন।
সিরামিক ও টাইলস শিল্পের সুরক্ষায় নীতি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার তাগিদ দেন গবেষকরাও। এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ডলার সাশ্রয় করতে নতুন করে আমদানি পণ্যের মূল্য যাচাই প্রয়োজনে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক নিয়েও ভাবা যেতে পারে। বাংলাদেশে আগামী দিনের প্রতিযোগিতার সক্ষমতার অংশ হিসাবে নিয়মিত ভিত্তিতে তদারকি হওয়া উচিত। কেননা, এর মাধ্যমে আমরা যেমন বাজার হারাচ্ছি, তেমনি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। সুতরাং এ জায়গা থেকে নিয়মিত ডাম্পিং রিলেটেড কনসার্নগুলো তদারকি হওয়ার দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
জেএ/এমজে