খুলনা: ভারতীয় টিভি শো ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা উপার্জনের লক্ষে কয়েকজন কিশোর মিলে নিরব মণ্ডল (১২) নামে এক স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর হত্যা করেছে বলে দাবি পুলিশের।
খুলনার ডুমুরিয়ার এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচ কিশোরকে আটক করা হয়েছে।
আটক পাঁচ কিশোর হলো- গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র সোহেল মোল্লা (১৫), হীরক রায় (১৫) ও পিতু মণ্ডল (১৪), দশম শ্রেণির ছাত্র পিয়াল রায় (১৫) ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র দ্বীপ মণ্ডল (১৩)। এর মধ্যে পিয়ালের বাড়ি ডুমুরিয়ার ভান্ডারপাড়া তেলিগাতি এলাকায় এবং অন্য চারজনের বাড়ি গুটুদিয়া এলাকায়।
শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কনি মিয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
ওসি বলেন, নিহত নিরব মণ্ডল গুটুদিয়া এসিজিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। স্কুল ছুটির পর পিয়াল তাকে ডেকে নিয়ে যায়। এদিকে, স্কুলের পেছনে পরিত্যক্ত একটি ভবনের মধ্যে অবস্থান করছিল পিতু, সোহেল ও দ্বীপ। পিয়াল নিরবকে নিয়ে সেখানে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা নিরবের পা ধরে রাখে এবং মুখ বন্ধ করতে চায়। এছাড়া রশি ঝুলিয়ে রেখেছিল দ্বীপ।
আটকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তাদের পরিকল্পনা ছিল নিরবকে অজ্ঞান করে তার বাবার কাছ থেকে টাকা আদায় করা। কিন্তু তারা প্রথমেই তাকে ঝুলিয়ে মেরে ফেলে। ২/৩ জন রশি টেনে ধরে রাখে। এতে সঙ্গে সঙ্গেই নিরবের মৃত্যু হয়।
শেখ কনি মিয়া আরও বলেন, সেখানে নিরবের মরদেহ রেখে তারা ভবনটি তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। হীরকের দায়িত্ব ছিল, নিরবের বাবার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা। নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিয়ে নিরবের বাবার কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। বিষয়টি জানার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচ জনকে আটক করি। নিরবের মরদেহ উদ্ধারের আগে প্রথমে সোহেলকে আটক করি, পরে দ্বীপ, পিয়াল ও পিতুকে আটক করা হয়। আর মরদেহ উদ্ধারের পর হীরককে আটক করা হয়।
পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার পর বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে যায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা সঙ্গে ছিলেন। সেখানে আটকদের দেখানো সেই ভবনের একটি কক্ষে মরদেহটি নোংরা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। নিরবের কাঁধে স্কুল ব্যাগ ছিল। তখন আমরা মরদেহটি উদ্ধার করি। এ সময় আমরা সেই ফোন ও সিম উদ্ধার করি।
এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ওসি বলেন, তারা ক্রাইম পেট্রোলের একটি পর্ব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল বলেই জানিয়েছে। সেই প্লান অনুযায়ী, কার কি ভূমিকা থাকবে, সেই অনুযায়ী তারা ভূমিকা নিয়েছে। তারা এই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা ক্রাইম পেট্রোল দেখেই মুক্তিপণ ৩০ লাখ টাকা দাবি এবং আগে পরে কি করবে সেই অনুযায়ী কাজ করেছে।
শেখ কনি মিয়া বলেন, আটকরা জানিয়েছে, টাকার জন্যই নিরবকে অপহরণ করা হয়। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগে তাকে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে ফাঁস দিয়ে মেরে ফেলা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের এবং আটক ৫ জনকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত নিরব মন্ডলের পিতা শেখর মণ্ডল বলেন, স্কুল ছুটির পর নিরব না ফেরায় বাসা থেকে ফোন করে আমাকে জানানো হয় যে, নিরব এখনো ফিরে আসেনি। এরপর ফোনে একজন নিরবের মুক্তির জন্য টাকা দাবি করে এবং পুলিশকে না জানাতে বলে। এসময় আমি বলি পুলিশকে জানাবো, আর তখনই ফোন কেটে দেয়। বিষয়টি আমি ডুমুরিয়া থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ ওই মোবাইল নাম্বার অনুযায়ী তাদের আটক করে।
তিনি বলেন, এমনভাবে যেন আর কোনো মা-বাপের বুক খালি না হয়। আমরা চাই, তাদের উপযুক্ত শাস্তি হোক।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩ , ২০২৩
এমআরএম/এনএস