নওগাঁ: দেশের উওরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। ১৮৭৭ সালে গঠিত হওয়া নওগাঁ মহকুমা থেকে জেলায় উন্নিত হয় ১৯৮৪ সালে।
প্রাচীন এই জেলায় উপজেলাগুলোতে দেখা মেলে উন্নয়নের ছোঁয়া। তবে এ দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে মূল শহরটি। নানা সমস্যা আর ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হয় এ শহরের বাসিন্দাদের।
১৯৬৩ সালে এই শহর ঘিরে গড়ে উঠা পৌরসভা প্রথম শ্রেণীতে উন্নিত হয়েছে ১৯৮৯ সালে। যার আয়তন প্রায় ৩৯ বর্গ কিলোমিটার। কাগজে কলমে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত শহরটি। শহরের চুড়িপট্টি, ডাবপট্টি, কবি শাহ্ আলম সড়কসহ গুরুত্বপূর্ন মোট ১৯টি সড়ক একদমই খানাখন্দে ভরা। সড়ক সমস্যাকে আরও জটিল করেছে তিন চাকার অটোরিকশা। সকাল হলেই অন্তত পাঁচ হাজার অবৈধ এই পরিবহন দাপিয়ে বেড়ায় পুরো শহর।
অন্যদিকে প্রধান সড়কটি চার লেনে উন্নিত হওয়ার কথা থাকলেও, তা ঝুলে আছে আশ্বাসে।
শহরের কাপড় পট্টি এলাকার ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বাংলানিউজকে জানান, শহরের প্রতিটি সড়ক ভাঙাচুরা। শুষ্ক মৌসুমেই সেগুলোতে চলাফেরা করাই দায়। আর বর্ষা মৌসুম আসলে চলাফেরার অযোগ্য হয়ে পড়ে সড়কগুলো। খানাখন্দকে ভরা সড়কগুলো প্রায় ১০ বছর হচ্ছে সংস্কার করা হয়নি। সড়কগুলো দেখলে মনে হবে না এটি একটি শহর। আজকাল গ্রামের রাস্তাগুলোও এর চাইতে অনেক ভালো থাকে।
তিনি আরও বলেন, এসব বিষয়ে প্রতিকার পেতে একাধিক বার মেয়রের কাছে বলা হয়েছে। তবে বেহাল দশা থেকে তো বের হয়ে আসতে পারেনি শহরবাসী। এমন অবস্থায় আমাদের চলাফেরা করাই দায় হয়ে পড়েছে।
শহরের গোস্তহাটি মোড় এলাকার বাসিন্দা একরামুল হক জানান, শহরে যেন মানুষের চেয়ে তিন চাকা বাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো শহর থাকে অটোরিকশার দখলে। বিশেষ করে বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। সময় মতো স্কুলে যাওয়া যায় না, রাস্তা পারাপার হওয়া যায় না। রাস্তার পাশে এখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। শহরটি দেখভাল করার মতো যেন কোনো মানুষ নেই। অভিভাবক শূন্য নওগাঁ শহর।
তিনি বলেন, এসব দুর্ভোগ থেকে অতিসত্বর নওগাঁবাসীকে মুক্ত করতে হবে। আমরা শুনেছি প্রধান সড়কটি চার লেন হবে। কিন্তু সেই কাজের কোনো অগ্রগতি দেখছি না।
নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনি জানান, শহরের ভেতরে যানজটের প্রধান কারণ তিন চাকার অটোরিকশা। পৌরসভার অনুমোদিত ছাড়াও পাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন শহরে অতিরিক্ত রিকশা ঢুকে পড়ে। শুধুমাত্র নওগাঁ পৌরসভার আটোরিকশা চললে তাও হতো। কিন্তু বাইরে থেকেও আরও আসে। এর ফলে যানজট আরও বেড়ে যায়। এছাড়া শহরের ভেতরের রাস্তাগুলো সংস্কার করতে না পারার প্রধান কারণ হচ্ছে ফান্ডিং না পাওয়া। তবে যত দ্রুত সম্ভব এই রাস্তাগুলোর কাজ শুরু হবে।
নওগাঁ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাশিদুল হক জানান, শহরে যানজট নিরসনে পুলিশ একা কিছু করতে পারবে না। এক্ষেত্রে পৌরসভার সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে এরইমধ্যে পুলিশ এবং জেলা প্রশাসন সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই যানজট নিরসনে কমিটি খুব ভালো ভূমিকা পালন করবে। আমাদের মনে হয় অটোরিকশাগুলো বন্ধ করা গেলে শহরে যানজট কমে যাবে।
অন্যদিকে শহরের প্রধান সড়কটি চার লেনের বিষয়ে নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, নওগাঁ সড়কের পক্ষ থেকে সব রকম কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। পরিকল্পনামাফিক লিখিত প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এখন তা একনেকে অনুমোদন হলেই শুরু হবে কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৩
এফআর