ঢাকা: বাংলাদেশের ওপর যেন কালো থাবা না পড়ে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অসচ্ছল প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ঘর ‘বীর নিবাস’-এর চাবি হস্তান্তরের এই অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে এই আহ্বান জানান।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন, জাতির পিতা তাদের প্রত্যেকের পরিবারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন। তিনি আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। নির্যাতিত মা-বোনদের চিকিৎসা, এমনকি বিদেশ থেকে নার্স, ডাক্তার নিয়ে এসে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন।
তিনি বলেন, তারা জাতির পিতার নির্দেশে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধ করেন এবং সেটি আমাদের জনযুদ্ধ ছিল। এই ধরনের জনযুদ্ধ খুব কমই দেখা যায়। জাতির পিতা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের জন্য একটি কল্যাণ ট্রাস্ট করে দেন এবং যেসব পরিত্যক্ত শিল্প কলকারখানায় পাকিস্তানিদের মালিকানা ছিল, ফেলে রেখে গিয়েছিল, এগুলোকে জাতীয়করণ করেন এবং এর মধ্য থেকে লাভজনক ৩২টি শিল্পকারখানা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে এনেছিলেন। এসব প্রতিষ্ঠানের দিয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যাতে চলতে পারেন, সেই ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, দুঃখজনক বিষয় হলো জাতির পিতাকে হত্যার পর সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান একে একে অলাভজনক হয়ে যায়, লুটপাটের আখড়া হয়ে দাঁড়ায়। আসলে মুক্তিযোদ্ধারা যে মুক্তিযোদ্ধা, এই কথা মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়। আমরা যে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি, সেই কথা যেন মানুষ ভুলে গিয়েছিল।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক চড়াই-উৎড়াই পার হওয়ার পর আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, এরপর থেকেই কিন্তু আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিয়ে এসেছি। দল মত নির্বিশেষে সব মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা এসব ব্যবস্থা করেছি। ৭১ সালে যারা জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছিলেন তাদের সম্মান দেখানো আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যাতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও সম্মান পান, সেই ব্যবস্থাই আমরা করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বংশ পরস্পরায় যারা আসবেন, তারাও যেন প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান, চাকরি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে। সেই কল্যাণ ট্রাস্ট, সেটিকে উদ্ধার করা এবং সবার যাতে কাজে লাগে সেই ব্যবস্থা করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা করেছি। ন্যূনতম ভাতা আমরা ২০ হাজার টাকায় করে দিয়েছি। যাদের ঘর নাই, বাড়ি নাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন এটা আমাদের লজ্জার ব্যাপার।
মুক্তিযোদ্ধারা মানবেতর জীবন যাপন করবেন না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ভিক্ষা করবেন, রিকশা চালাবেন বা মানবেতর জীবন যাপন করবেন, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা যখন ক্ষমতায়, তখন তা হতে পারে না। সেজন্য তাদের ঘরবাড়ি নির্মাণ ও বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। যোদ্ধারা যেন মাথা উঁচু করে বলতে পারেন হ্যাঁ, আমরা মুক্তিযোদ্ধা, ছেলেমেয়েরা বলতে পারেন আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, অন্তত এই সম্মানটা দেওয়ার চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশি যারা আমাদের সাহায্য করেছেন, সহযোগিতা করেছেন, আমরা তাদেরও সম্মাননা দিয়েছি। কোনো দেশ স্বাধীনতার পর এভাবে সম্মান দেয় কি না, আওয়ামী লীগ কিন্তু তা দিয়েছে। স্বাধীনতা সম্মাননা, মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা, মৈত্রী সম্মাননা দিয়ে, যারা আমাদের বিদেশি বন্ধু, মিত্র শক্তি, তাদের আমরা সম্মাননা দিয়েছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত, ভারতের অনেক সেনাসদস্য যুদ্ধ করে আত্মাহুতি দিয়েছেন, তাদের পরিবারকেও আমরা সম্মাননা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানতে পারে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কত গৌরবের ছিল। আরও যারা মুক্তিযোদ্ধা বাকি আছেন, তাদের প্রত্যেককে ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। আশা করি এই বছরের মধ্যে ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ আর থামাতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়েই এই বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা গড়ে তুলব। বাংলাদেশের ওপর আর যেন কালো থাবা না পড়ে, দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
এসকে/আরএইচ