বরগুনা: নিজের কবর নিজেই খুঁড়লেন এবং ইট দিয়ে পাকা করে নির্মাণ করলেন বরগুনার ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ দুলাল ফকির।
বরগুনার সদর উপজেলার ৭ নম্বর ইউনিয়নের ঢলুয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে বরাদ্দকৃত দুটি ঘরে বসবাস করেন দুলাল।
দুলাল চান মৃত্যুর পরে তাকে এখানেই দাফন করা হোক।
স্থানীয়ভাবে বেশ পরিচিতি রয়েছে দুলালের। পেশায় তিনি ছিলেন একজন ডোম।
বর্তমানে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের ঘটনায় পরিচয় না শনাক্ত হওয়া নিহতদের গণকবরের দেখাশোনা করছেন দুলাল।
এর আগে বরগুনা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের আরশিনগর এলাকার মর্গে মৃতদেহ কাটা-ছেঁড়ার কাজ করতেন তিনি। এই পেশায় থেকেই পরিবারের ভরণপোষণ মিটিয়ে ছেলে-মেয়েকে করেছেন শিক্ষিত।
নিজের কবর নিজেই খননের বিষয়ে দুলালের ভাষ্য, সারা জীবন কাজ করেছেন। কারও কাছে হাত পাতেননি। বিদায় বেলায়ও চান না কারও বোঝা হতে। তাই নিজের কবরস্থান নিজেই নির্মাণ করলেন।
এছাড়াও আরও কারণ জানিয়েছেন তিনি।
দুলাল ফকির বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ১০ ভাই কিন্তু সবাই মিলে আজ পর্যন্ত মা-বাবার কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর পাকা করতে পারিনি। আমি ব্যক্তি উদ্যোগে চেষ্টা করলেও অন্য ভাইদের কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। তাই আমি জীবিত থাকতেই আমার কবরটি সুরক্ষিত রাখতে একটি পাকা ঘরের মেঝেতে তৈরি করে যেতে চাই। আমি মারা যাওয়ার পরে যদি লাশটি পাওয়া যায় তাহলে সকলে মিলে এখানে দাফন করবেন। যাতে আমার কবর অন্যরা দেখতে পারে।
তবে এলাকাবাসীদের বক্তব্য, মৃত্যুর পর নিজের কবরকে মাজার শরিফ বানানোর লক্ষ্যে পাকা করেছেন দুলাল।
স্থানীয়রা বাংলানিউজকে বলেন, দুলাল ফকির এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। বরগুনার সব রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্রনাথ দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক দুলালের। তিনি বিভিন্ন সময় জেলা ও জেলার বাইরে গিয়ে মানুষের বিভিন্ন রোগের ঔষধি গাছ ,তাবিজ ও ঝাড়ফুঁক দিয়ে আসছেন। তার ইচ্ছে মৃত্যুর পর যেন তার কবরকে মাজার শরিফ বানানো হয়।
ঢলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল হক স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, লোকমুখে শুনতে পেরেছি দুলাল ফকির ইটের তৈরি ঘরের মধ্যে নিজের কবর স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। আমি খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩
এসএএইচ