ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মিথ্যা মামলায় পত্রিকার বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা জেলে, মা কাঁদলেন সংবাদ সম্মেলনে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২৩
মিথ্যা মামলায় পত্রিকার বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা জেলে, মা কাঁদলেন সংবাদ সম্মেলনে

ঢাকা: দেশের শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি সান’র বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ। স্ত্রী সঙ্গে কলহ হয় তার।

নিরাপত্তা চাইতে তিনি কল দেন জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে। খবর পেয়ে আসেন পুলিশ সদস্যরা । কিন্তু নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে তারা মারধর করেন সোহেলকে। এতে জখম হন ভুক্তভোগী। এতেই ঘটনা শেষ হয়নি। নারী নির্যাতন ও পুলিশের উপর হামলার মিথ্যা মামলা দেওয়া হয় তার বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাকে জেলে পাঠান।

রোববার (৫ মার্চ) ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) সংবাদ সম্মেলন সামগ্রিক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সোহেলের মা ফরিদা ইয়াসমিন। কাঁদতে কাঁদতে ছেলের কষ্টের কথা বলেন তিনি। প্রতিবাদ জানান সোহেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, পুলিশি হয়রানি ও মারধরের।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফরিদা। জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে গাজীপুরের গাছা থানার মৈরান গ্রামে স্ত্রী মোসাম্মৎ ওয়াহিদা আক্তার রূপাকে নিয়ে বসবাস করছেন সোহেল। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রূপার সঙ্গে তার বিবাদ হয়। রূপা বিষয়টি তার বড় ভাই হাসানুজ্জামানকে ফোন করে জানান। পরে হাসানুজ্জামান অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে নিয়ে তাদের বাসায় আসেন এবং পুলিশ পরিচয় দিয়ে সোহেলকে ভয়-ভীতি দেখান, হুমকি দেন।

এতে ভয় পেয়ে সোহেল নিজেকে বাঁচাতে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করেন। খবর পেয়ে গাছা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আল মামুনসহ ৪ পুলিশ সদস্য তার বাসায় আসেন। পরে তারা সোহেল, রূপা ও তার ভাইয়ের সঙ্গে আলাদা কথা বলে। এ সময় পুলিশে আছেন এক আত্মীয়ের সঙ্গে এএসআই মামুনের কথা বলিয়ে দেন হাসানুজ্জামান। এরপরই মামুনের আচরণ বদলে যায়, এবং সবাই মিলে সোহেলকে মারধর করতে থাকেন।

সোহেলের মায়ের দাবি, অতর্কিত মারধরের কারণে তার ছেলের নাক-মুখ ফেটে যায়। এ পরিস্থিতিতে সোহেল তার বড় ভাই শাহরিয়ার আলম কোয়েলকে ফোন করেন। সব শুনে ওই রাতেই কোয়েল ছোট ভাইয়ের বাসায় আসেন। এরপর তিনি গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইব্রাহিম হোসেনকে পুরো ঘটনা জানান। ওসি ইব্রাহিম ফোনের মাধ্যমে সোহেলকে ছেড়ে দিতে এএসআই আল মামুনকে নির্দেশ দেন, এবং চিকিৎসা দিতে বলেন।

ওসির নির্দেশে সোহেলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে কোয়েল তার ছোট ভাইকে হাসপাতালে যেতে বলেন। কিন্তু সেটি না করে সোহেল তার ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদ জানাতে গাছা থানার ওসির কাছে যান। তখন আরও ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য ইব্রাহিমের বাসায় গিয়ে কোয়েলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে এবং পুলিশি হেফাজতে সোহেলকে গাজীপুরের তাজউদ্দিন আহামেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

এ ঘটনার পর ভোরের দিকে কিছু মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে কোয়েলকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু সোহেলকে ছাড়তে পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন গাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাদিরুর জামান। টাকা দিতে না পারায় পরে সোহেল ও কোয়েলের বিরুদ্ধে পুলিশর কাজে বাধা দেওয়া ও হামলার মামলা দেওয়া হয়। পাশাপাশি সোহেলে স্ত্রী রূপাকে দিয়ে সোহেলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনেও একটি মামলা করায়। এসব মামলায় সোহেল বর্তমানে কারাগারে ও কোয়েল জামিনে আছেন বলে জানান তাদের মা ফরিদা ইয়াসমিন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে মানুষ সহায়তা পায়। আর গাছা থানা উল্টো আমাদেরই হয়রানি করেছে। আমার ছেলেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তাই সোহেল ও কোয়েলের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিচার দাবি করছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগীদের বাবা দেওয়ান সামসুল আলম, কোয়েল ও তার অপর ছোট ভাই জি এম শফিকসহ পরিবারের সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২৩
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।