রাজশাহী: গ্রেফতার এড়াতে ভারত পালিয়ে যান বিভিন্ন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের হোতা নয়ন ইসলাম (২৫)।
সেদেশ থেকে ফেরার পথে গত ০৬ মার্চ যশোরের বেনাপোল সীমান্তে তাকে গ্রেফতার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ।
গ্রেফতার নয়ন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার অচিনঘাট গ্রামের আজগর হোসেন মন্ডলের ছেলে। মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা তিনি।
নয়নকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ জানিয়েছে, ভর্তি ও নিয়োগসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূল হোতা এই নয়ন। জাল প্রশ্নপত্র ও প্রবেশপত্র তৈরি করে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল তার এই চক্রটি।
এদিকে গ্রেফতারের পরে নয়নকে ধরে নিয়ে আসে ডিবি পুলিশ। এরপর নয়নের কাছ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড, পরীক্ষার প্রবেশপত্র, জীবন বৃত্তান্ত, নাগরিক সনদপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) বিজয় বসাক।
তিনি বলেন, পুলিশ জানতে পারে, জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন নিউমার্কেট সংলগ্ন পিজি টাওয়ার বিল্ডিংয়ের ১০ম তলায় অবস্থান করছেন। এখান থেকেই তারা মহানগরীর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মালিকদের সহযোগিতায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পরে আরএমপি কমিশনার আনিসুর রহমান বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মহানগর গোয়ন্দা পুলিশকে নির্দেশ দেন।
এরপর রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আল মামুনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আব্দুল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মশিয়ার রহমান একটি ইউনিট নিয়ে এই জালিয়াত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মহানগর ডিবি পুলিশের ওই টিম পিজি টাওয়ারের ১০ম তলায় অভিযান পরিচালনার জন্য গেলে জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়।
পরে ফ্ল্যাটের মালিকের মাধ্যমে জানা যায় ভাড়াটিয়ার নাম নয়ন ইসলাম। তিনি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে বসবাস করতেন। বাড়ির মালিক আরও জানান নয়ন নিজেকে কখনও ডাক্তার, কখনও সরকারি কর্মকর্তা বা এনজিও কর্মী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থী ও ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করেন। আর অনেকেই এখানে আশা যাওয়া করে।
পরে ডিবি পুলিশ প্রতারক চক্রের মূল হোতার নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে আসামি নয়নসহ অন্যান্য সদস্যরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরসমূহে বিশেষ চিঠি পাঠায়।
কিন্তু হোতা নয়ন এর আগেই ভারতে পালিয়ে যায়। এরপর নয়ন ইসলাম গত ৬ মার্চ বিকেলে যশোর জেলার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন।
এ সময় পুলিশের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বেনাপোল ইমিগেশন পুলিশ তাকে আটক করে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করেন। বিষয়টি তারা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) জানান। এরপর গত ৭ মার্চ বিকেলে ডিবি পুলিশ যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানায় গিয়ে নয়নকে নিজ হেফাজতে নিয়ে আসে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত নয়ন জানিয়েছেন, এসব প্রতারণায় তার সহযোগী হলেন পলাতক আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলর বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র সনেট। এবং আরও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন সহযোগী রয়েছে তার। তারা পরস্পর যোগসাজসে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে চাকরি ও মেডিকেল কলেজ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের সঙ্গে মোবাইল ফোন নম্বর নেন। এরপর বিভিন্ন অ্যাপসের (হোয়াটস অ্যাপস, ভাইবার, টেলিগ্রাম) মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের চাকরি দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আশ্বাস দিয়ে মোবাইল ফিন্যান্স (বিকাশ, রকেট, নগদ) অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, গ্রেফতারসহ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পেনাল কোডে একটি মামলা করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময় : ১৯২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২৩
এসএস/এসএএইচ