ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

১৪ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, কেমন ছিল বিএনপি আমল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৩
১৪ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, কেমন ছিল বিএনপি আমল

ঢাকা: বিএনপি-জামায়াত আমলের শেষ বছর ২০০৬ সালের বাংলাদেশের সঙ্গে গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়ার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৬ সালের সঙ্গে ২০২২ সালের তথ্যের তুলনা করলে দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৪০ গুণ এগিয়েছে দেশ।

সম্প্রতি কাতার সফর নিয়ে সোমবার (১৩ মার্চ) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ২০০৬ সালের বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানে তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে। এখন সবাই বাংলাদেশকে রোল মডেল মনে করে।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যহত আছে বলেই এই উন্নয়ন করাটা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত আমলের শেষ বছর অর্থাৎ ২০০৬ সালের সঙ্গে ২০২২ এর তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরেন।

দুই আমলের অর্থনীতি, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, কৃষি, যোগাযোগ অবকাঠামো, ডিজিটাল সেক্টরে উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন।

নিচে বিএনপি-জামায়াত আমলের সঙ্গে ২০২২ এর বাংলাদেশের তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরা হলো:

 

 অর্থনীতি
১. ২০০৬ সালে দেশে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৪০ শতাংশ, ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধি ৭.৫০ শতাংশ।

২. ২০০৬ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, বিগত সময়ে ৫ গুণ বেড়ে ২০২২ সালে মাথাপিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলার।

৩. ২০০৬ সালে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশ। আর ২০২১ সালে মূল্যস্ফীতি কমে ৫.৫৫ শতাংশ হয়। বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে কিছুটা বেড়ে ২০২২ সালের মূল্যস্ফীতি ৮.৫৭ শতাংশ।  

৪. ২০০৬ সালে বাজেট ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা। আর ১০ গুণ বেড়ে ২০২২ সালে বাজেট ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

৫. ২০০৬ সালে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ০ দশমিক ৭৪৪ বিলিয়ন ডলার (১ বিলিয়ন ডলারের নিচে)। ৩৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে হয়েছে ৩২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

৬. রপ্তানি আয় ছিল ২০০৬ সালে ১০.০৫ বিলিয়ন ডলার। ৫ গুণ বেড়ে ২০২২-এ তা ৫২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

৭. ২০০৬ সালে রেমিট্যান্স ছিল ৪.৮ বিলিয়ন ডলার আর ২০২২-এ ৫ গুণ বেড়ে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

৮. ২০০৬ সালে আমদানি ব্যয় ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ছিল। ২০২২ সালের আমদানি ব্যয় ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।

৯. ২০০৬ সালে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। ৪০ গুণ বেড়ে ২০২২ সালের এ খাতের বরাদ্দ ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।

যোগাযোগ অবকাঠামো

১. ২০০৬ সালে জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়ক ছিল ১২ হাজার ১৮ কিলোমিটার। প্রায় ৩ গুণ বেড়ে ২০২২ সালে হয়েছে ৩২ হাজার ৫২১ কিলোমিটার।

২. ২০০৬ সালে গ্রাম্য সড়ক ছিল ৩ হাজার ১৩৩ কিলোমিটার। ২০২২ সালে প্রায় ৩ গুণ বেড়ে হয়েছে ৮৭ হাজার ৯৭৭ কিলোমিটার।

৩. দেশের মোট রেলপথ ২০০৬ সালে ছিল ২ হাজার ৩৫৬ কিলোমিটার। যা ২০২২ সালে এসে হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৬ কিলোমিটার।

 

বিদ্যুৎ

১. ২০০৬ সালের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। আওয়ামী লীগ আমলে ৮ গুণ বেড়ে ২০২২ সালে ২৫ হাজার ২২৭ মেগাওয়াট হয়েছে।

২.বিদ্যুৎ সুবিধাভোগীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ ছিল ২০০৬ সালে। ২০২২ সাল থেকে দেশের ১০০ শতাংশ জনগণ বিদ্যুৎ পাচ্ছে।

 

মানুষের জীবনমান উন্নয়ন

১. ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ, আর অর্ধেক কমে ২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ।

২. দেশের মানুষের গড় আয়ু ২০০৬ সালে ছিল ৫৯ বছর। ২০২২ সালে গড় আয়ু বেড়ে ৭২ দশমিক ৯ বছর হয়েছে।

৩. ২০০৬ সালে সুপেয় পানি পেত ৫৫ শতাংশ মানুষ। ৪৩.৭ শতাংশ বেড়ে ২০২২ সালে দেশের ৯৮.৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পান করতে পারে।

৪. শিশু মৃত্যুর হার (প্রতি হাজারে) ৮৪ জন ছিল ২০০৬ সালে। ২০২২ সালে ৪ গুণ কমে ২১ জনে দাঁড়িয়েছে শিশু মৃত্যুর হার।

৫. ২০০৬ সালে প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যু হার ছিল ৩৭০ জন প্রায় আড়াই গুণ ১৬১ জন হয়েছে ২০২২ সালে।

 

শিক্ষা

১. ২০০৬ সালে স্বাক্ষরতার হার ছিল ৪৫ শতাংশ। ২০২২ সালে বেড়ে ৭৫.৬ শতাংশ হয়েছে স্বাক্ষরতার হার।

২. প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ওই সময়ে ছিল ৫৪ শতাংশ। ৪৪.২৫ শতাংশ বেড়ে ২০২২ সালে ৯৮.২৫ শতাংশ হয়েছে।

৩. ২০০৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় ঝড়ে পড়ার হার ছিল ৪৯ শতাংশ। এই সংখ্যা কমে ২০২২ সালে হয়েছে ১৩.১৫ শতাংশ।

৪. ২০০৬ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংখ্যা ছিল ৬৫ হাজার ৬৭২ টি। ২০২২ সালে এসে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
 

কৃষি

১. ২০০৬ সালে সামগ্রিক কৃষি উৎপাদন হয়েছিল ২ কোটি ৬১ লাখ টন। ২০২২ সালে প্রায় ৪ গুণ বেড়ে হয়েছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ১৮ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন।
 
২. দানাদার শস্যের উৎপাদন ২০০৬ সালে ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন। ২০২২ সালে হয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন।
 
৩. মোট মৎস্য উৎপাদন ২০০৬ সালে হয় ২১.৩০ লাখ মে. টন। ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ৫০.১৪ লাখ মে. টন।

৪. ২০০৬ সালে গবাদী পশু সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ২৩ লাখ ০১ হাজার। আর ২০২২ সালে ৭ কোটি ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার হয়েছে।

 

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ

১. ২০০৬ সালে মোট জনগোষ্ঠীর ০.২৩ শতাংশ ছিল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। ২০২২ সালে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে ৭৩.৫৫ শতাংশ মানুষ।
           
২. ২০০৬ সালে মোবাইল ফোন সিম (In Operation) ছিল ১৯ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৯০ লাখ। ২০২২ সালে দাঁড়িয়েছে ১৮২.৫৩ মিলিয়ন বা ১৮ কোটি ২০ লাখ।
           
বাংলাদেশ সময়: ০০২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৩
এমইউএম/এসআই/এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।