ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘সৌদিতে যাওয়ার কথা ঝুমার, হাসপাতালে শুয়ে ডাকছেন শিশু আব্দুল্লাহকে’

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৩
‘সৌদিতে যাওয়ার কথা ঝুমার, হাসপাতালে শুয়ে ডাকছেন শিশু আব্দুল্লাহকে’ হাসপাতালে ঝুমা বেগম।

ঢাকা: ‘আমার সন্তানদের ফোন দাও, আমার ছেলে আব্দুল্লাহর (২) সঙ্গে কথা বলবো। তাদের ফোন দাও।

রোববার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় এভাবেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বেডে চোখের পানি ফেলে কোমরসহ শরীরের কয়েক অংশে হাড়ভাঙ্গা নিয়ে কাতরাচ্ছেন মাদারীপুরের এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত চার সন্তানের জননী ঝুমা বেগম।

কয়েকদিন আগে স্ত্রী ও তার সন্তানসহ ওমরাহ পালন করার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ঝুমার প্রবাসী স্বামী শেখ আমিনুর রহমান। সেই কাগজপত্র নিতেই দেবর সজীবকে সঙ্গে নিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা আসার সময় এ দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এতে ঘটনাস্থলেই ঝুমার দেবর সজীবের মৃত্যু হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ঝুমা বেগম।

রোববার বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অস্ত্রোপচার কক্ষে ঝুমা শুয়ে আত্মীয়-স্বজনদের বলছেন, ‘আমার সন্তানদের ফোন দাও, আব্দুল্লাহকে ফোন দাও আমি কথা বলবো। ’

এ সময় ঝুমা বার বার খালি চোখের পানি ফেলছেন আর বলছেন, আমি আর পারছি না, আমার সারা শরীর নাড়াতে পারছি না। আমি মনে হয় মারা যাবো।

ঝুমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে থাকেন। তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর থানার চটকা গ্রামে।

তার নিকটতম আত্মীয় কাজী রিপন বিল্লাহ জানান, আগামী রোববার তাদের ওমরাহ পালন করতে যাওয়ার কথা। তার প্রবাসী স্বামী সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। টিকিট ও ভিসা নিতেই ঝুমা তার দেবর সজীবকে নিয়ে গোপালগঞ্জ চন্দ্রদিঘালিয়া মোড় থেকে ঢাকাগামী ওই যাত্রীবাহী বাসে ওঠেন। উদ্দেশ্য ঢাকার গুলশানের একটি এজেন্সিতে গিয়ে ভিসা-টিকিটসহ সবকিছু নিতেই আসছিল। পথেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। গুলশানে আর যাওয়া হলো না। এখন তিনি হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন।

ঝুমা বাংলানিউজকে জানান, ড্রাইভারের ঠিক পেছনের সিটেই তারা বসাছিলেন। বাসভর্তি যাত্রী হঠাৎ কী যে হলো, কিছুই বুঝতে পারেননি তারা। পরে হাসপাতালে তার জ্ঞান ফিরে।

এদিকে জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দিন জানান, ঝুমার কোমরসহ শরীরের কয়েক জায়গায় হাড়ভাঙ্গা আছে। এখন তাকে ব্লাড দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তার যা যা দরকার সবই করা হচ্ছে। অর্থোপেডিকসহ অন্যান্য বিভাগও চিকিৎসকরা দেখছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না।

এদিকে চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ (এএসআই) মো. মাসুদ জানান, এখন পর্যন্ত নয়জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজনকে আনার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেছেন। বাকি সাতজনের মধ্যে ২-৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সবাইকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৩
এজেডএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।