ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বন্ধুত্ব গড়ে বিদেশি পার্সেল দেখিয়ে প্রতারণা, নাইজেরিয়ানসহ আটক ৪

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৩ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৩
বন্ধুত্ব গড়ে বিদেশি পার্সেল দেখিয়ে প্রতারণা, নাইজেরিয়ানসহ আটক ৪

ঢাকা: রাজধানীতে একটি প্রতারক চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১০), যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাবসয়ী, চাকরিজীবী, উচ্চবিত্ত শ্রেণিসহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়তেন। পরে বিদেশি পার্সেলের লোভ দেখিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করতেন।

সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান থানার এলাকার এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত ও রাজধানীর বাড্ডা, ভাটারা থানা এলাকা এবং কদমতলী থানার শামীমবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করে র‌্যাব। চক্রের দুই সদস্য নাইজেরিয়ান।

আটকরা হলেন- চার্লস ইফানাডি (২৭), ফ্র্যাঙ্ক কোকো (৩৫) শফি মোল্লা (৩৬), ও মোছা. মৌসুমি খাতুন (২৭)। বুধবার (২৪ মে) রাতে তাদের আটকের সময় একটি মোটরসাইকেল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৮টি মোবাইল ফোনসহ ও ভুয়া ইনভয়েস জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে কারওয়ানবাজারে নিজেদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১০র অধিনায়ক, অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. ফরিদ উদ্দিন।

তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেঁটে ব্যাবসয়ী, চাকরিজীবী উচ্চবিত্ত ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে এ চক্রের সদস্যরা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতো। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর নিজেদের তারা পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসেবে জাহির করত। এর মাধ্যমে তারা ভুক্তভোগীকে নিজের প্রতি বিশ্বাসী করে তুলত। পরে পরস্পরের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় করার জন্য উপহারের কথা বলত তারা।

ভুক্তভোগী অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তারা উপহারের মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ফেলত। এর ধারাবাহিকতায় চক্রের এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে ভুক্তভোগীকে ফোন করত। ভুক্তভোগী ব্যক্তি বন্ধুত্বের মান রক্ষায় ওই পার্সেল নিতে চাইলে তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিতে বাধ্য হতে হতো।

র‌্যাব-১০র অধিনায়ক আরও জানান, সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান থানার এলাকার এক নারীর সঙ্গে এক বিদেশির পরিচয় হয়। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব হলে ওই ব্যক্তি গত ১৭ মে সিরাজদীখানের ওই নারীকে উপহার দিয়েছে বলে জানায়। তার ঠিকানায় একটি পার্সেল পাঠানো হয়েছে, এবং সেটি এয়ারপোর্ট থেকে সংগ্রহ করতে বলা হয়।

১৮ মে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমসের পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা এক নারী ভুক্তভোগীকে জানায়, তার নামে অতি মূল্যবান একটি পার্সেল এসেছে। সেটি ডেলিভারি করতে কাস্টমসের চার্জ বাবদ ৬০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

ফোন করা নারীর ভাষ্য অনুযায়ী সিরাজদীখানের ওই নারীকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়। তিনি সে অ্যাকাউন্টে ৩৫ হাজার টাকা পাঠান। কাস্টমসের পরিচয় দেওয়া নারী পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর কাছে সিকিউরিটি বাবদ আরও ৩০ হাজার টাকা দিতে বলে চাপ দেওয়া শুরু করেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী ওই অ্যাকাউন্ট নম্বরে আরও ৩০ হাজার টাকা পাঠান। এরপর পার্সেলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তাকে বলা হয়, সময়মতো বাসায় পৌঁছে যাবে।

কিন্তু সেটি না পৌঁছায় ভুক্তভোগী আবার ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি এ সময় ভুক্তভোগীর সঙ্গে বাজে ব্যবহার করে আরও ৮ হাজার ৩২০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে বলে। এরপর ভুক্তভোগী তার পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করে। সেটি অভিযোগ আকারে আসে র‌্যাবের কাছে।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব জানতে পারে, প্রতারক চক্রের বিদেশি সদস্যরা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বাসা ভাড়া নিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশা শুরু করে। এর আড়ালে তারা বাংলাদেশি সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে।

আটক চার্লস ইফানাডির নামে আগে মামলা রয়েছে। মৌসুমি ও শফি আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের বাংলাদেশি সদস্য। মূলত তাদের মাধ্যমেই এ প্রতারক চক্রের বিদেশি সদস্যরা ভিকটিম সংগ্রহ, বন্ধুত্ব স্থাপন, কাস্টমস অফিসার পরিচয় এবং শেষে অর্থ সংগ্রহ করে আসছিল।

অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. ফরিদ উদ্দিন আরও জানান, চার্লস ইফানাডি ২০১৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসে। মাদক মামলায় তার পাসপোর্ট কোর্ট জব্দ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি পালিয়ে গিয়ে কাপড়ের ব্যবসার শুরু করেন। বাংলাদেশ থেকে কাপড় কিনে নাইজেরিয়ায় রপ্তানি করতেন। বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলেও তিনি পরিচয় দেন। তিনিই আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের মূলহোতা। কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে তিনি এসব কর্মকাণ্ড ঘটাতেন।

তার চক্রের সদস্য ফ্র্যাঙ্ক কোকো ২০২১ সালে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসেন। এরপর চার্লস ইফানাডির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার সঙ্গে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন কোকো। তিনিও নিজেকে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিতেন। তিনি চার্লসের প্রধান সহযোগী।

ভুক্তভোগীদের ব্যাপারে এক প্রশ্নের উত্তরে ডিআইজি ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা এমন পাঁচজন ভুক্তভোগী পেয়েছি। চারজন ঢাকার, একজন ফেনীর। মূলত লোভের কারণে তারা প্রতারিত হয়েছেন।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আটকদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে মূলত তাদের ডিপোর্ট করতে। সরকারি খরচে এদের ডিপোর্ট প্রক্রিয়াধীন। দেশে দুই হাজারের মতো নাইজেরিয়ান আছে। এদের ৫০ শতাংশ অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছে। চক্রটির সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান র‌্যাব-১০ অধিনায়ক।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৩
এমএমআই/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।