সিরাজগঞ্জ: অসম প্রেম কখনও সুষম হয় না, এ কথাটি অনেক সময় মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আরও একবার এমন ঘটনার দেখা মিলেছে উল্লাপাড়া উপজেলার দাদপুর গ্রামে।
জানা গেছে, দাদপুর গ্রামের ইরান সরকারের ছেলে জুয়েল সরকারের (২৪) সঙ্গে ফেসবুকে সম্পর্ক গড়েন ভারতীয় গৃহবধূ নার্গিসা বেগম (২৯)। জুয়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে তিনি নিজেকে কুমারী দাবি করেছিলেন। প্রেমের টানে স্বামী-সন্তান ফেলে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে।
উল্লাপাড়ায় এসে নিজেকে নাইসা মল্লিক নামে পরিচয় দেন নার্গিসা বেগম মল্লিক। প্রেমের শুরুতে মিথ্যা তথ্য দিলেও নার্গিসার ৫ বছরের ছোট জুয়েল তার ভালোবাসাকে ছোট হতে দেননি। প্রেমিকাকে বিয়ে করে দিব্যি সংসার করছেন। এসব আবার মেনে নিয়েছে জুয়েলের পরিবারও।
প্রায় তিন সপ্তাহ আগে জুয়েলের কাছে চলে আসেন নার্গিসা। গত ১ জুন বাংলাদেশি আইন মোতাবেক তাদের বিয়ে হয়। সে সময় এ খবর পেয়ে বাংলানিউজসহ বিভিন্ন অনলাইন, টিভি ও পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়। গণমাধ্যম নার্গিসার কাছে জুয়েলের সঙ্গে প্রেমের কথা জানতে চায়। তিনি তখন বলেন, দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর ছেড়ে দিয়েছেন। তার পরিবারের বাবা, ভাই-ভাবী ছিলেন। দেড় বছর আগে জুয়েলের সঙ্গে প্রেম হওয়ায় পরিবারের সবাইকে ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছেন। সে সময় নিজের বিয়ে ও সন্তানের কথা গোপন করেন।
নার্গিসার এ খবর প্রকাশিত হওয়ার দুদিন পর ভারতীয় গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। খবরগুলোয় নার্গিসার বিয়ে ও সন্তান সম্পর্কে বলা হয়। জানানো হয়, ১২ বছর আগে বাঁকুড়া জেলার ফজলুর রহমান মীরের সঙ্গে দানগড় ধারেশা মল্লিক পাড়ার বাসিন্দা নার্গিসা বেগম মল্লিকের বিয়ে হয়। মীর জিসান নামে তাদের ৮ বছরের সন্তানও রয়েছে। হঠাৎ নিখোঁজ হন গৃহবধূ নার্গিসা। এ ঘটনায় দমদুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছিলেন ফজলুর রহমান। বাংলাদেশি গণমাধ্যমে তার খবর প্রকাশ করে নার্গিসার দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানতে পারেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফজলুর রহমান মীর বলেন, একদিন নার্গিসা আমাকে ফোন করে বাংলাদেশে চলে যাওয়ার কথা জানান। আমি তাকে অসংখ্যবার ফিরে আসতে বলি। আমাদের ছেলে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে হাইকমিশনেও অভিযোগ করেছি।
নার্গিসা বাবা খায়রুল মল্লিক বলেন, আমার মেয়ে তার স্বামীর সঙ্গে ১২ বছর ঘরসংসার করছে। ফজলুরের সঙ্গে তার কোনো সমস্যা ছিল না। মোটামুটি সুখে শান্তিতেই ছিল। কেন বেরিয়ে গেছে আমরা বুঝতে পারিনি।
পরবর্তীতে এসব বিষয়ে নার্গিসার মুখোমুখি হয় বাংলানিউজ। এ সময় সব স্বীকার করে নেন নার্গিসা বেগম। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ফজলুর রহমান তাকে রাতদিন নির্যাতন করতেন। যে কারণে তার সঙ্গে সংসার করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই সংসার ছেড়ে চলে এসেছেন। বাংলাদেশে এসে জুয়েলকে তিনি বিয়ে করেছেন। এখন খুব ভালো আছেন। জুয়েলের পরিবার সব মেনে নিয়েছে।
জুয়েলের বাবা ইরান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা তো এতকিছু জানতাম না। ভেবেছিলাম মেয়েটি অবিবাহিত। আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর জানতে পারি ভারতে তার স্বামী ও সন্তান আছে। যেভাবেই হোক মেয়েটি এখানে এসেছে বাংলাদেশের আইন মোতাবেক বিয়েও হয়েছে। আমরা তাকে ত্যাগ করতে পারি না। এ বিষয়ে জুয়েল কোনো কথা বলেননি।
উল্লাপাড়ার দূর্গানগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবাদুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে আসা মেয়েটি বিবাহিত বলে আমরা পরে জানতে পেরেছি। স্বামীর ঘর থেকে টাকা ও গয়না নিয়ে পালিয়ে এসেছেন তিনি। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেন নার্গিসা। তিনি দাবি করেন, এ তথ্য মিথ্যা।
উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে আসা তরুণীর বিয়ের খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তার পাসপোর্ট ও ভিসা যাচাই করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতে হাইকমিশনে কেউ কোনো অভিযোগ করলে ও অফিসিয়ালি নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২৩
এসএম/এমজে