নেত্রকোনা: সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিমকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামিকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৭ জুন) দুপুরের দিকে দুর্গাপুর প্রেসক্লাব এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।
সভায় দুর্গাপুর প্রেসক্লাব সভাপতি নির্মলেন্দু সরকার বাবুলের সভাপতিত্বে সাংবাদিক ধনেশ পত্রনবীশের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন- সাবেক প্রেসক্লাব সভাপতি এস এম রফিকুল ইসলাম রফিক, সাবেক সহ-সভাপতি তোবারক হোসেন খোকন, সিনিয়র সাংবাদিক সুমন রায়, ডা. কামরুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, আবিদ হাসান বাপ্পি, নাজমুল হুদা সারোয়ার, রিফাত আহমেদ রাসেল, আল নোমান শান্ত।
এ সময় দুর্গাপুর প্রেসক্লাবের সব সাংবাদিক সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবাদ সভায় নাদিম হত্যার সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসিসহ সারাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে অনতিবিলম্বে সাংবাদিক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৪ জুন) রাতে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জের পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত নাদিমকে পিটিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর রাত ১২টার দিকে সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত সাংবাদিকের মরদেহ রাতে তার নিজবাড়ি গরুহাটিতে নেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরের জামালপুর করেসপন্ডেন্ট ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনের উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি বকশিগঞ্জ উপজেলার নিলাখিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে।
বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর অপকর্ম নিয়ে নিউজ করার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি নাদিমের স্বজনদের।
মৃত্যুর আগে নাদিম নিজেও হামলার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এর আগে গত ১০ মে ইউপি চেয়ারম্যান বাবুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এ নিয়ে বাংলানিউজে ‘দুইবার বিয়ের পরও সন্তান-স্ত্রীকে অস্বীকার করছেন ইউপি চেয়ারম্যান!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ১৪ মে তার স্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ‘আমি আমার স্বামী চাই, একসঙ্গে সংসার করতে চাই’ শিরোনামে বাংলানিউজে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ২০ মে সাবিনা ইয়াসমিন তার স্বামী মাহমুদুল আলম বাবুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার অথবা পদ থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। বাবু জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়েও বাংলানিউজে ‘আ.লীগ থেকে স্বামীর বহিষ্কার চেয়ে স্ত্রীর আবেদন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
এর আগে, গত ১৪ মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জামালপুরের নাদিমসহ চার সাংবাদিকের নামে মামলা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। ৩০ মে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
নিহত গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগমের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে নাদিমের ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আগেও তিনি নানাভাবে তাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই তাকে হত্যা করেছেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এরও আগে গত ১১ এপ্রিল হামলার শিকার হয়েছিলেন নাদিম। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের সমর্থকরা এ হামলা করেন। গত ১০ জানুয়ারি ‘বকশীগঞ্জে আ. লীগের কমিটিতে রাজাকারের সন্তান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের জেরে হামলার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের গ্রুপের লোক বলেও নাদিমের পরিবারের অভিযোগ।
নাদিম হত্যাকাণ্ডে ‘প্ল্যানমেকার’ চেয়ারম্যান বাবুসহ এখন পর্যন্ত ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।
সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বাবুকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
আরও পড়ুন
নাদিম হত্যাকাণ্ড
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২৩
এসআরএস