শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় মাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ছেলের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে মেহেদী হাসান জাহিদ মাঝিকে (২৫) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘড়িষার বাজারের হাজী জালাল উদ্দিন মার্কেটের তৃতীয় তলায় নিহতের নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নার্গিস আক্তার (৪০) ঘড়িষার বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম মাঝির স্ত্রী।
নিহতের পরিবার, নড়িয়া থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘড়িষার বাজারে ব্যবসায়ী সেলিম মাঝির একটি বিপণিবিতান রয়েছে। হাজী জালাল উদ্দিন মার্কেটের মালিকও সেলিম মাঝি। মার্কেটের তৃতীয় তলার একটি বাড়িতে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করেন তিনি। সেলিম ও নার্গিস আক্তার দম্পতির বড় ছেলে মেহেদী হাসান জাহিদ। জাহিদ ঢাকার উত্তরার একটি মাদরাসায় পড়ালেখা করতেন। ২০২১ সালে জঙ্গি তৎপরতার একটি মামলায় র্যাব তাকে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। ৭ মাস কারাগারে থাকার পর স্বজনরা তাকে জামিনে মুক্ত করেন। এরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি নড়িয়ার ঘড়িষারে থাকতেন। বুধবার বিকেলে একটি বিয়ের দাওয়াত খেয়ে জাহিদের মা-বাবা বাড়িতে আসেন। পরে জাহিদ ও নার্গিস আক্তারকে বাড়িতে রেখে সেলিম দোকানে চলে যান। এরপরে নার্গিস আসরের নামাজে দাঁড়ান, ঠিক তখনই জাহিদ পেছন থেকে নার্গিসের চোখে মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দেন। তখন নার্গিস চিৎকার করতে করতে একপর্যায়ে ঘরের বেলকনিতে চলে যান। জাহিদ সেখান থেকে নার্গিসের চুলের মুঠি ধরে রুমে নিয়ে এসে বটি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এ ধস্তাধস্তি চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেলিম বাসায় এসে দরজা বন্ধ দেখতে পান। তিনি অনেক ডাকাডাকির পরও ভেতর থেকে দরজা না খোলায় স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় দরজা ভেঙে ভেতরে গেলে রক্তাক্ত অবস্থায় নার্গিসকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় পাশেই ছেলে জাহিদকে বটি ও রক্তাক্ত হাতে বসে থাকতে দেখেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নার্গিসকে উদ্ধার এবং জাহিদকে আটক করে বেঁধে রাখা হয়। নার্গিসকে চিকিৎসার জন্য ঘড়িষার বাজারের বেসরকারি মা ও শিশু ডায়াবেটিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই ঘটনায় গতকাল বুধবার গভীর রাতে নার্গিসের স্বামী সেলিম মাঝি বাদী হয়ে ছেলে মেহেদী হাসান জাহিদকে (২৫) আসামি করে নড়িয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘড়িষার বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, শুনেছি ওই ছেলে জিহাদি বই পড়তো। জেলও খেটেছে। ওর মাকে প্রায়ই বই কিনে দেওয়ার জন্য চাপ দিত। ওর মা এবং পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দিত।
নিহত নার্গিসের স্বামী সেলিম মাঝি বলেন, আমার স্ত্রী একজন শ্রেষ্ঠ নারী ছিলেন। সব সময় পর্দা করতেন। ইসলামের পথে চলতেন। এভাবে স্ত্রীকে হারাবো ভাবতে পারি নাই। গতকাল (বুধবার) রাতেই জাহিদের নামে মামলা করেছি।
নড়িয়া থানার ওসি মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, ছেলের হাতে মা খুনের ঘটনায় বাবা সেলিম মাঝি বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে গ্রেপ্তার মেহেদী হাসান জাহিদ কে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এবং হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গভীরভাবে আমরা তদন্ত করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
আরএ