ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিতম্বে ঢুকে যাওয়া সুঁই বের করতে অস্ত্রোপচার, শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২৩
নিতম্বে ঢুকে যাওয়া সুঁই বের করতে অস্ত্রোপচার, শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ শিশু তানজিম

বরিশাল: বরিশালে নিতম্ব থেকে সুঁই বের করতে গিয়ে অস্ত্রোপচারের সময় ছয় মাসের একটি শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (০১ আগস্ট) ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল নগরীর বান্দ রোডস্থ শিল্পকলা একাডেমি সংলগ্ন রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে।



মৃত শিশু তানজিম পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ডাউকা গ্রামের ফিরোজ খানের ছেলে।

শিশুর মামা রাকিব জানান, ভাগিনা তানজিমের নিতম্বে ছোট একটি সুঁই ঢুকে। গলাচিপায় এক্সরে করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পটুয়াখালীতে আসেন। সেখানের চিকিৎসক বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের কাছে গিয়ে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। গলাচিপা থেকে সোমবার (৩১ জুলাই) তারা প্রথমে শেবাচিমে আসেন। সেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার ভয়ে চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের পরামর্শে তারা নগরের আগরপুর রোডের মিডটাউন হাসপাতালে ভর্তি হয়।

ডা. তৌহিদুল ইসলাম তাদের জানিয়েছিলেন মিডটাউনে অস্ত্রোপচারের ভালো ব্যবস্থা নেই। রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে সেখানে পাঠিয়েছেন। ডা. তৌহিদুল ইসলামের পরামর্শে মঙ্গলবার সকালে অপারেশন করতে রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে এসে ভর্তি হন।
 
রাকিব বলেন, অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার আগেও আমার ভাগনে খেলা করেছে।  

এ সময় বাবা ফিরোজ খান চিৎকার করে বলেন, ডা. তৌহিদুল ইসলাম নিজে বলেছেন শিশুটির নিতম্বে একটি সুঁই ঢুকেছে। এটা মেশিনে অপারেশন হবে। এটা কোনো বিষয়ই নয়, ২০ হাজার টাকা জমা দেন বলেই আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।  

তাকে শান্ত করে রাকিব বলেন, বরিশালে কয়েকবার এক্সরে করে সুঁইয়ের অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়েই এই অস্ত্রোপচারের সিদ্বান্ত নেন চিকিৎসক।

রাকিবের অভিযোগ করে বলেন, আমি ভেতরে ছিলাম। অস্ত্রোপচারের জন্য তানজিমের শরীরে আটবার সুঁই ফুটানো হয়। এরপর কোমরে ইনজেকশন দিলে তানজিম অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

রাকিব বলেন, ডা. তৌহিদুল ইসলাম মেশিনে অস্ত্রোপচার করার কথা বলে হাতে করেছেন। অজ্ঞান শিশুকে কখনো অক্সিজেন দেননি। কাটা স্থানে সেলাই করেননি। তাদের বার বার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা কয়েকজন ওটিতে হাসি-ঠাট্টায় ব্যস্ত ছিলেন। পরে নিচে আমার পরিচিত ফার্মেসির একজনকে নিয়ে এলে আমাকে আর প্রবেশ করতে দেয়নি। কিছু পরেই আমি ভেতরে বোনের চিৎকার শুনতে পাই। ওরা আমার ভাগনেকে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ তোলেন রাকিব হোসেন।

এ ঘটনায় অভিযোগ দেওয়া হবে কি না সেই বিষয়ে এখনো সিদ্বান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন রাকিব।

ঘটনাস্থলে এসে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ফজলুল হক বলেন, আমরা ৯৯৯ নম্বরে সংবাদ পেয়ে এখানে ছুটে এসেছি। মৃত শিশু তানজিমের অপারেশন হয়েছিল। শিশুটির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।  

এ ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দেন উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুল হক।

হাসপাতাল সূত্রে জানায়, শিশুর অস্ত্রোপচার করেছেন ডা. তৌহিদুল ইসলাম। কিন্তু শিশুটিকে অজ্ঞান করেছেন ডা. মনিরুল ইসলাম।

শিশুকে এনেসথেসিয়া দেওয়া চিকিৎসক ডা. মনিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত, হৃদয় বিদারক। ছয় মাস বয়সী একটি শিশুকে অজ্ঞান করা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু শিশুটির জরুরি অস্ত্রোপচারও প্রয়োজন। তাই ঝুঁকি নিতে হয়েছে। এজন্য আমার ১৬ বছরের চিকিৎসা পেশায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু অস্ত্রোপচারের শেষ মুহূর্তে এসে শিশুর হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারেনি। এখানে আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না। ডা. তৌহিদুল ইসলামের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু ফোনকল তিনি রিসিভ করেননি।

তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর বেডে নেওয়ার সময় শিশুটি শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর চিকিৎসকরা তাকে রিকভারি করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেননি। তার এক মামা নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিলে তাকে আমরা অপারেশন থিয়েটারে ছিলেন, তিনি পুরো ঘটনা দেখেছেন, এখন যদি তারা অভিযোগ করে তাহলে কিছু করার নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২৩
এমএস/এএটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।