বরিশাল: ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার চাপায় ১০ বছরের এক শিশু নিহতের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছে বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) বেলা দেড়টা থেকে ব্রজমোহন কলেজের সামনের সড়ক দুই পাশ দিয়ে ব্যারিকেট দিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।
বিএম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দিন বলেন, বেপরোয়া গতির হলুদ অটোরিকশার চালকের কারণে বিএম কলেজের সামনের সড়কে ১০ বছরের শিশু জান্নাতুল মাওয়া ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাতে এ জায়গায় একত্রিত হয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা শিশু হত্যার বিচারের পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক চাই। এছাড়া আমাদের কিছু দাবি রয়েছে, যেগুলো হলো-২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারী অটো ড্রাইভারকে আইনের আওতায় আনতে হবে। ক্যাম্পসের সামনে সকল ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে। ক্লাস চলাকালীন কলেজের সামনের রাস্তা ব্যতিত বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করতে হবে। নথুল্লাবাদ থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত সড়কে যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ করতে হবে এবং এ সড়কে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর গতিরোধক ও ডিভাইডারের ব্যবস্থা করতে হবে। সেইসঙ্গে কলেজের সামনে কোনো চাঁদাবাজ কর্তৃক ফুটপাত ও সড়ক দখল করে দোকান বসানো বন্ধ করার নিশ্চিয়তা প্রশাসনকে দিতে হবে। আমাদের এ দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবি আমাদের। আর সেই দাবি না মানা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করেই থাকবে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে যোগযোগ করা হলে আমরা দাবির কথা তাদের জানিয়েছি।
এদিকে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক অবরোধের ফলে নগরের অন্যান্য সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সেইসাথে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও শহর কেন্দ্রীক যাতায়াতকারী যানবাহন ও মানুষকে ঘুরে বিকল্প পথে চলাচল করতে হচ্ছে। সেইসাথে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যেই বিএম কলেজের সামনের ফুটপাত ও সড়ক আটকে গড়ে ওঠা টং দোকানগুলো নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে বিষয়টি সমাধানের জন্য পুলিশ প্রশাসন একাধিকবার শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছে। তবে শিক্ষার্থীরা দাবি না মানা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, শিশু নিহতের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
যদিও শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের খবরে শিক্ষক প্রতিনিধিরাও ঘটনাস্থলে এসেছেন। এসময় বিএম কলেজের সমাজ কল্যাণ বিভাগের শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিএম কলেজ ছাড়াও এখানে অশ্বিনী কুমার শিশু নিকেতন, কলেজ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শেরে বাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর সামনের সড়কে যদি চলাচলে কোন নিয়মতান্ত্রিকতা না থাকে, সড়ক নিরাপদ থাকার জন্য যে যৌক্তিক উপায়গুলো থাকে সেগুলো মানা না হলে খুব দুঃখ জনক।
তিনি বলেন, আমরা সরকারসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বলবো আর কোনো শিশুর প্রাণ না যাক, আর কোনো মায়ের কোল খালি না হোক, বিএম কলেজের কোনো শিক্ষার্থীর মনে আঘাত না লাগুক সেই ব্যবস্থা যেন তারা করেন।
এরআগে বেলা ১২ টার দিকে বিএম কলেজের সামনের সড়ক পারাপারের সময় জান্নাতুল মাওয়া নামে এক শিক্ষার্থীকে চাপা দেয় ব্যাটারি চালিত হলুদ অটোরিকশা। চাপা দিয়ে অটোরিকশাটি নিয়ে চালক পালিয়ে গেলেও শিশুটির ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। নিহত মাওয়া পটুয়াখালী সদরের ফৌজদারি পোল এলাকার মো. নিজাম উদ্দিনের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, মাওয়া অভিভাবকদের সাথে বেড়াতে বিএম কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা নিকট আত্মীয়ের কাছে বেড়াতে এসেছিলেন। ঘটনার সময় সে চিপস কিনে রাস্তা পার হচ্ছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
এমএস/এমএম