সাভার (ঢাকা): স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই অবস্থান করেও হত্যার মামলার ৭ নম্বর আসামি হয়েছেন বকুল ভুঁইয়া নামের এক যুবলীগ নেতা।
সাভারের আশুলিয়ায় রবিউল নামের এক পোশাক শ্রমিক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আসামি করা হয়েছে এ যুবলীগ নেতাকে।
আশুলিয়ার ইউনিক ভুঁইয়াপাড়া এলাকার হিরণ ভুঁইয়ার ছেলে ও আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়ন যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ইসমাইল হোসেন বকুল ভুঁইয়া।
জানা গেছে, স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য গত ১৪ জুলাই থেকে ভারতের চেন্নাইয়ে অবস্থান করছেন বকুল ভুঁইয়া। সেখানে চেন্নাই ফার্টিলিটি সেন্টারে তার স্ত্রীর চিকিৎসা চলছে। আর পোশাকশ্রমিক রবিউল হত্যাকাণ্ড ঘটে ৩১ জুলাই।
বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) বিকেলে বকুল ভূঁইয়ার কলকাতা ট্রানজিট দিয়ে ভারতে যাওয়ার বোর্ডিং পাসের ডকুমেন্ট হাতে এসেছে। এছাড়া সদ্য তোলা ছবিও হাতে এসেছে। তার সঙ্গে ভিডিওকলে কথা হয়েছে বাংলানিউজের।
বোর্ডিং পাসের ডকুমেন্টে দেখা গেছে, ১৪ জুলাই বকুল ভারতে গেছেন এবং এখনো তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। ভিডিওকলে কথা বলে স্পষ্ট হওয়া গেছে তিনি এখনো ভারতেই অবস্থান করছেন।
এরআগে পূর্বের দ্বন্দ্বের জেরে গত ৩১ জুলাই দক্ষিণ বাইপাল এলাকার রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর পোশাকশ্রমিক রবিউল ইসলামকে জীবিত অবস্থাতেই বস্তায় বন্দি করে ধামরাইয়ের ভারারিয়া এলাকার পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান রবিউল। ওই ঘটনায় রাতেই ধামরাই থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন নিহত রবিউলের বোন ফারজানা আক্তার ঝিলিক। ওই মামলায় যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন বকুল ভুঁইয়াকে ৭ নাম্বার আসামি করা হয়েছে। মামলায় বকুল ভুঁইয়ার বাবা, চাচা, চাচাতো ভাই সবাইকেই আসামি করা হয়েছে।
ইসমাইল হোসেন বকুল ভুঁইয়া মোবাইল ফোনে বলেন, গত ২৭ জুন রবিউল ও সোহাগ মুন্সী আমার চাচাতো দুই ভাইকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছিলেন। সেসময় আমি দেশেই ছিলাম। এসময় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার দুই নম্বর আসামি ছিল রবিউল। গতকাল জানতে পারি রবিউলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করেছেন নিহত রবিউলের বোন। এই মামলায় আমাকে ৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য গত এক বছর যাবৎ ভারতের চেন্নাইয়ে দৌড়াদৌড়ি করছি। গত ১৪ জুলাই স্ত্রীকে নিয়ে ভারতের চেন্নাইয়ে অবস্থান করছি। এই ঘটনার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত নই। কীভাবে আমার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তোলা হলো তা আমার বোধগম্য নয়। অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শাস্তি হোক এটা আমিও চাই। আমি মামলা থেকে অব্যাহতি চাই।
নিহত রবিউলের বোন ও মামলার বাদী ফারজানা আক্তার ঝিলিক বলেন, আমার ভাইকে রাস্তা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নৃশংসভাবে পিটিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি, জীবিত অবস্থায় বস্তাবন্দি করে তারা ধামরাইয়ের পুকুরে ফেলতে চেয়েছিল। এমন জঘন্য অপরাধের সঙ্গে তাদের (বকুলের) পুরো পরিবারসহ আত্মীয়স্বজন জড়িত। আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছি।
ভারতে থেকে বকুল ভুঁইয়া কীভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ভাই মারা গেছেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা মিলে আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশ এই হত্যায় যারা যারা জড়িত তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনবেন।
ধামরাই থানার পরিদর্শক (ওসি) হারুন-অর রশিদ বলেন, বাদী যাদের যাদের নাম মামলায় উল্লেখ করেছেন তাদেরকেই আসামি করা হয়েছে। কেউ যদি ঘটনার দিন ইন্ডিয়ায় থাকে আর যথাযথ প্রমাণ দেখাতে পারে তাহলে চার্জশিটে তার নাম বাদ পড়বে। এখানে কাউকে অযথা হয়রানি করা হবে না।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধামরাই থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল কুমার দাস বলেন, রবিউল হত্যা মামলায় ইতিমধ্যে ৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার ১১ নম্বর আসামি রবিউল হত্যার সঙ্গে জড়িত মর্মে আদালতে ৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি গ্রেপ্তার চার আসামি তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৩
এসএফ/এসএএইচ