ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বরগুনায় ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২৩
বরগুনায় ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড

বরগুনা: বরগুনায় চারদিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

রোববার (৬ আগস্ট) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক ও আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মো. মাহাতাব হোসেন।

তিনি বললেন,জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বিরামহীন এ বৃষ্টিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়ছে। প্রায় সব মানুষের দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন ঘটছে।  

নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বরগুনার প্রধান তিন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি প্রবাহ কয়েকদিন এমন থাকবে বলে জানান তিনি। ফসলের মাঠ ডুবে গেছে ও অনেক মাছের ঘের থেকে মাছ ভেসে গেছে।  

সদর উপজেলার পতাকাটা ইউনিয়নের ব্যাটারি চালিত তিন চাকার অটোরিকশা চালক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘কয়দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টিতে গাড়ি চালাতে পারি নাই। ছেলে মেয়ের প্রাইভেটের টাকা দেওয়ার সময় এসেছে। আগামীকাল তাদের টাকা দিতে হবে। এখন পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ’ 

বরগুনা পৌর এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াস খান ও তার ছেলে মো. ইসমাইল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বাবা ছেলে ব্যাটারি চালিত তিন চাকার ভ্যান দিয়ে শুকনো লাকড়ি (কাঠ) বিক্রি করি বিভিন্ন স্থানে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বাসা থেকে বের হতে পারি না। আর লাকড়িও বিক্রি করতে পারছি না। আমাদের কোনো বেচা বিক্রি নাই। এখন কীভাবে যে কিস্তির টাকা জোগাড় করবো এটাই ভেবে কুল পাই না।

তালতলী উপজেলার বড় আম খোলার মো. সাব্বির বাংলানিউজকে বলেন, টানা বৃষ্টি হচ্ছে, আমার পুকুরসহ এলাকার অনেকের মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এরপর বৃষ্টি হলে আর মাছ ঘেরে বা পুকুরে রাখা সম্ভব হবে না।

সদর উপজেলার ১০ নম্বর ইউনিয়নের বাসিন্দা এমবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি বাংলানিউজকে বলেন,‘ইলিশের ভরা মৌসুমেও মাছ শিকার করতে পারছি না বৈরী আবহাওয়ার কারণে। বঙ্গোপসাগর এতটাই উত্তাল, সাগরে ট্রলার নিয়ে টিকে থাকাই দায়। ’ 

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ট্রলারগুলো ভারতের ট্রলারের তুলনায় ছোট সাইজের। তাই উত্তাল সাগরে টিকে থাকা দায় আমাদের জন্য। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ট্রলারগুলো লাল রঙের এবং আকারে অনেক বড়। ছোটখাটো বৈরী আবহাওয়ায় তাদের কিছুই হয় না।

বেতাগী উপজেলার তুলাতুলি এলাকার কৃষক মো. আনোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমনের জন্য দুই একর জমিতে বীজতলা করেছি। বৃষ্টিতে হালচাষ করতে পারি নাই। এখন পানির যে চাপ। জমিতে বীজ সব পইচ্চা নষ্ট হইয়া যাইবে। এখন নতুন কইরা বীজ করারও সময় নাই। ’

বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, গত ১ আগস্ট সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উত্তাল হতে থাকে সাগর। ওইদিনই জেলেরা তীরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় পাঁচ হাজার ট্রলার পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন,‘এ বৃষ্টি আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। বরগুনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২৩
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।