কক্সবাজার: কয়েকদিনের টানা বর্ষণ, পূর্ণিমার জোয়ার ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়ন বন্যার পানিতে ডুবে যায়।
তবে সোম ও মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার (০৯ আগস্ট) বন্যাকবলিত এলাকায় ২ থেকে ৩ ফুট পানি কমেছে। অবশ্য চকরিয়া ও পেকুয়ার উপকূলীয় কিছু কিছু এলাকায় এখনও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, পানি কিছুটা কমলেও এখনও ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বন্যার পানির স্রোতে জেলায় প্রায় ৫৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ পর্যন্ত (তিন দিনে) জেলায় পাহাড় ধস, বন্যার পানিতে ভেসে এবং সাপের ছোবলে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন একজন। নিহতের মধ্যে ৫ জনই চকরিয়ায়।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, চকরিয়া ও পেকুয়ার ২৫ ইউনিয়ন এবং পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা এখনও বন্যাকবলিত। চকরিয়ায় ৩ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ জন এবং পেকুয়ায় ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এসব এলাকায় সরকারি বেসরকারিভাবে শুকনো ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হলেও এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট কাটেনি।
বুধবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সীমিত আকারে যান চলাচল শুরু হয়েছে। বিকেলে আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। গত সোমবার থেকে কক্সবাজারে বন্যা দেখা দেয়।
চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বাংলানিউজকে বলেন, গত সোমবার থেকে কক্সবাজারে বন্যা দেখা দেয়। গত পাঁচ দশকের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যা। বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন চরম দুর্ভোগের মধ্যে আছেন।
তিনি জানান, এবারের বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এর মধ্যে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বেশির ভাগ নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান বলেন, আজও আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে কোনো সতর্কতা সংকেত নেই।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, বুধবার বিকেল পর্যন্ত জেলায় ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যায় ৫৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে।
এ পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় ৫৮ মেট্টিক টন চাল ও নগদ ৭ লাখ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৫০০টি।
জেলা প্রশাসক বলেন, ২০৮ আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৫ হাজার ৭৭৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২৩
এসবি/এমজেএফ