টাঙ্গাইল: দাড়িয়াপুর উত্তরপাড়া গ্রামের রঞ্জু মিয়ার তৃতীয় শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে সামিয়া, বয়স ৯ বছর। গত ৬ সেপ্টম্বর সকাল সাতটায় ওই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাইভেট পড়তে যায়।
এ ব্যাপারে ৭ সেপ্টেম্বর সখীপুর থানায় সামিয়ার বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরদিন ৮ সেপ্টেম্বর সামিয়াদের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি ধান ক্ষেতে কাঁদা চাপা অবস্থায় সামিয়ার মরদেহ পাওয়া যায়।
পুলিশ সূত্র জানায়, এই হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও সখীপুর থানা পুলিশের সমন্বয়ে একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়। তদন্ত দলের সঙ্গে যুক্ত এক সদস্য জানায়, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাব্বিরের মুঠোফোন সেটটি চিহ্নিত করা হয়।
সাব্বিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। পরে সে গোয়েন্দা পুলিশকে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানায়।
সাব্বির মিয়া (২১) টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার দাড়িয়াপুর উত্তরপাড়ার আনোয়ার হোসেনের ছেলে। সে নিজ গ্রামে ছোট একটি মুদির দোকান করতেন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ আহসানুজ্জামান জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সাব্বির জানিয়েছেন, ঋণ পরিশোধের জন্য তার টাকার খুব প্রয়োজন হয়ে পরে। এজন্য দেড় মাস আগে সিদ্ধান্ত নেয় অপহরণ করে মুক্তিপণ নেবেন। সেই টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিজ্ঞতার জন্য ইউটিউবে তিনি বিভিন্ন অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা দেখতেন। সেগুলো দেখে বুঝতে পারেন এমন কারো সন্তানকে অপহরণ করতে হবে, যাদের চাওয়া মাত্রই টাকা দেওয়ার সামর্থ আছে। এছাড়া নিজ এলাকার কাউকে অপহরণের পর মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিলে পরে বিপদে পড়তে হবে। তাই ইউটিউবে দেখা অভিজ্ঞতা থেকে সিদ্ধান্ত নেন, অপহরণ করে হত্যা করবেন। পরে মুক্তিপণ নেবেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সামিয়াকে অপহরণ ও হত্যার বর্ণনা দিয়ে পুলিশকে সাব্বির জানিয়েছেন, সামিয়ার স্কুলের রাস্তায় সাব্বিরের দোকান। তার দোকানের সামনে দিয়েই সামিয়া প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসা করতো। ঘটনার আগে সিদ্ধান্ত নেন সামিয়াকেই অপহরণ করবেন। ৬ সেপ্টেম্বর সামিয়া সকাল আটটার পর প্রাইভেট পড়ে নির্জন পথে একা বাড়ি ফিরছিল। পথে সাব্বির তাকে অপহরণ করে একটি বাঁশঝাড়ের ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করেন। প্রায় ১০ মিনিট গলা চেপে রাখার পরও সামিয়ার মৃত্যু হয় না। তখন একটি দড়ি গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর বাঁশের ঝড়া পাতা দিয়ে সামিয়ার মরদেহ ঢেকে দেন। পরে সাব্বির বাড়ি ফিরে যান। এরপর তার মুঠোফোনে একটি ইমু একাউন্ট খুলেন। সেই একাউন্ট থেকে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে সামিয়ার বাবার মুঠোফোনে ভয়েস ক্ষুদেবার্তা পাঠান। ওইদিন রাতে সাব্বির বাঁশঝার থেকে সামিয়ার মরদেহ নিয়ে ধানক্ষেতে কাঁদা মাটি দিয়ে চাপা দিয়ে রাখেন।
ইউটিউব দেখে সাব্বির নিজের কণ্ঠসর পরিবর্তন করার অ্যাপের কথা জানতে পেরেছিলেন। সে অনুযায়ী তিনি মুক্তিপণ চাওয়ার জন্য একটি অ্যাপ ব্যবহার করে নিজের কণ্ঠ পরিবর্তন করে রেকর্ড করেন। এছাড়া এলাকা ছেড়ে গেলে পুলিশ বা স্থানীয় লোকজন সন্দেহ করতে পারেন এটাও জেনে ছিলেন ইউটিউব থেকে। তাই তিনি এলাকা ছেড়ে যাননি। মুঠোফোনের সকল রেকর্ড মুছে ফেলেছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার সখীপুর থানায় সাংবাদিক সম্মেলনে সাব্বিরকে গ্রেপ্তারের কথা জানান। তিনি জানান, সাব্বিরকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩
এমএম