ঢাকা: প্রশাসনের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আছে এক হাজার ২৪৬টি। আর সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে ৫৮টি বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
সরকারের ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাঠানো তথ্য নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন (২০২২-২৩) এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ।
বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক বছরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগের অধীনে সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে মোট ৫৮টি বিভাগীয় মামলা হয়। এর মধ্যে ৩০টি নিষ্পত্তি হয়েছে। আর ২৮টি এখনও অনিষ্পন্ন আছে। মোট এক হাজার ২৪৬টি অভিযোগের সবগুলোই নিষ্পত্তি হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে শৃঙ্খলা ও দুর্নীতিজনিত ১৮ হাজার ৬২৯টি প্রতিবেদন দিয়েছে শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ।
বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান নীতিমালা অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২-৯ গ্রেডভুক্ত একজন কর্মকর্তা, ১০-১৬ গ্রেডভুক্ত দুইজন কর্মচারী, ১৭-২০ গ্রেডভুক্ত একজন কর্মচারী এবং দপ্তর বা সংস্থার প্রধানদের মধ্যে থেকে এক জনকে শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত, সেবামুখী, জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে প্রজাতন্ত্রের কর্মসম্পাদনে মেধাসম্পন্ন জনবল নিয়োগ ও তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়াও মন্ত্রণালয় সব বিভাগ এবং তার অধীনে দপ্তর এবং প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্বশায়িত সংস্থার জনবল ও সরঞ্জামসহ সাংগঠনিক-কাঠামো প্রণয়ন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত সম্মতি প্রদান এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থার বিলুপ্তি বা আকার সংকোচনের কারণে উদ্বৃত্ত জনবলের যথাযথ আত্তীকরণ সংক্রান্ত কাজ করে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে চার হাজার ২৮৪ কোটি ১৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৮টি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে এ অর্থবছরে আরএডিপিতে ৩৬২ কোটি ৪৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নিয়োগে মহিলাদের জন্য কোটা সংরক্ষণ করেছে। তাদের শিক্ষা উন্নয়নে সরকারের গৃহীত কর্মসূচির ফলস্বরূপ সরকারি-বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে প্রতিবছর নারীর অংশগ্রহণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংরক্ষিত কোটার পাশাপাশি মেধা কোটায়ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নারীরা সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সচিব, ডিসি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা নিয়োগ পাচ্ছেন। ২০২০ সালে গ্রেড ভিত্তিক নারী কর্মচারী ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার ৪৭৭জন। ২০২১ সালে ৪ লাখ ৬৮৮ জন এবং ২০২২ সালে ৪ লাখ ৬৮৮ জন।
সরকারি কর্ম কমিশনের পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ৯ গ্রেডের কর্মচারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নারীদের সংরক্ষিত ১০ ভাগ কোটার ছাড়াও মেধা কোটায় তারা নিয়োগ পাচ্ছেন। ৩৪তম বিসিএস থেকে ৩৯তম বিসিএসের নারী কর্মচারী অনেক নিয়োগ পেয়েছেন। ৩৫তম বিসিএসে মোট ২ হাজার ১২৫ জনের মধ্যে নারী ৫৯৫ জন এবং পুরুষ ১ হাজার ৫৩০জন, ৩৬তম বিসিএসে মোট ২ হাজার ২৫৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে নারী ৫৮৪ জন এবং পুরুষ ১ হাজার ৬৭১ জন। ৩৭তম বিসিএস মোট ১ হাজার ২৪৯ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে নারী ৩০৯ জন এবং পুরুষ ৯৪০ জন। ৩৮তম বিসিএসে মোট ২ হাজার ১৩৪ জন নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে নারী ৫৭৫ জন এবং পুরুষ ১ হাজার ৫৬২ জন। ৩৯তম বিসিএসে (বিশেষ) মোট ৬ হাজার ৭২৯ জন নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে নারী ৩ হাজার ১৩৭ জন এবং পুরুষ ৩ হাজার ৫৯২ জন এবং ৪২তম বিসিএসে (বিশেষ) মোট ৪ হাজার জন নিয়োগ পেয়েছেন। তার মধ্যে নারী ১ হাজার ৯৬১ জন এবং পুরুষ ২ হাজার ৩৯ জন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৩
এমআইএইচ/এফআর