ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাবাকে কেমোথেরাপি দিতে গিয়ে লাশ হলেন একই পরিবারের চারজন!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
বাবাকে কেমোথেরাপি দিতে গিয়ে লাশ হলেন একই পরিবারের চারজন!

রাজশাহী: দুরারোগ্য ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন ইনসাব আলী (৭৫)। তাই তাকে কেমোথেরাপি দেওয়ার জন্য শনিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে নাটোরের গুরুদাসপুর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে রাজশাহী নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

 সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে, মেয়ে ও নাতনি। কিন্তু পথেই বেপরোয়া মালবাহী ট্রাক কেড়ে নিলো সবার প্রাণ! একই সঙ্গে লাশ হলেন পরিবারের চার সদস্য।  একই দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অটোচালকেরও।  

হৃদয়বিদারক এ দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন স্বজনরা।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর এলাকায় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজনসহ মোট পাঁচজন নিহত হয়েছেন। বিকেল ৩টার দিকে বেপরোয়া একটি ট্রাক যাত্রীবাহী অটোরিকশাটিকে চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার কান্তপুর গ্রামের ইনসাব আলী (৭৫), তার ছেলে আইয়ুব আলী লাবু (৪২) ও মেয়ে পারভীন বেগম (৩৫) এবং ইনসাব আলীর নাতনি রাজশাহীর শাহ মখদুম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী শারমীন সুলতানা (১৭) ও একই উপজেলার মকিমপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে সিএনজি চালক মোকলেসুর রহমান মখলেস (৪৫)।  

নিহতদের স্বজনরা জানান, ইনসাব আলী ক্যানসারে আক্রান্ত। তাকে কেমোথেরাপির জন্য রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

একই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত রাজশাহী মহানগরের কাটাখালী সিটি গেইট এলাকার রিপন আলীর ছেলে হৃদয়কে (১৮) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে জরুরি বিভাগ থেকে তাকে হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর হয়। আহত হৃদয় ট্রাকের হেলপার বলে জানা গেছে। ঘটনার পর থেকে ট্রাকচালক পলাতক।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, পণ্যবাহী একটি ট্রাক রাজশাহী শহর থেকে পাবনার দিকে যাচ্ছিল। বিপরীত দিক নাটোর থেকে যাত্রীবাহী একটি অটোরিকশাও রাজশাহীর দিকে আসছিল। এ সময় পুঠিয়ার বেলপুকুর এলাকায় এই অটোরিকশা পৌঁছালে ট্রাকটি চাপা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে ট্রাক চাপায় ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। আর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভয়াবহ এ সড়ক দুর্ঘটনায় অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। অটোরিকশার পাঁচজন যাত্রীই ট্রাক ও অটোরিকশার নিচে চাপা পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা গুরুতর আহত পাঁচজনকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠায়।

রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক (ইএমও) ডা. এমএ জলিল জানান, হাসপাতালে যেই পাঁচজনকে আনা হয়েছিল তাদের মধ্যে দুই নারীসহ ৪ জন মারা গেছেন। আহত অন্য একজনের অবস্থাও সংকটাপন্ন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে।  

জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জামিরুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়েই বেলপুকুর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনায় মোট পাঁচজন মারা গেছেন। তাদের চারজনই একই পরিবারের আত্মীয়-স্বজন। একই পরিবারের ওই চারজন চিকিৎসার জন্য রাজশাহী আসছিলেন। দুর্ঘটনার পর ট্রাকচালক পালিয়ে যায়। তবে চালকের সহকারী হৃদয় আহত হয়ে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘাতক ট্রাকচালককে আটকের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে রাজপাড়া ও বেলপুকুর থানায় মামলা হবে।

আরও পড়ুন>>> রাজশাহীতে ট্রাকের ধাক্কায় পাঁচজন নিহত

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।