ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘চাকরি না তোর জীবন বড়?’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২৩
‘চাকরি না তোর জীবন বড়?’

যশোর: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) লিফট অপারেটরের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে যাওয়া ১৭ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।  

ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, পরীক্ষা দিতে গেলে যবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে তাদের তুলে নিয়ে হলের একটি কক্ষে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখেন।

পরীক্ষা শেষে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।  

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক সংগ্রহ করতে গেলে সেটিও ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।

যবিপ্রবি প্রশাসন ও ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট অপারেটর পদে চাকরি পরীক্ষা হয়েছে। ১১ পদের বিপরীতে এ পরীক্ষায় প্রার্থী ছিলেন ৩৮ জন। এর মধ্যে ২১ জন পরীক্ষায় অংশ নেন।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লিফট অপারেটর পদে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের কয়েকজন প্রার্থী ছিলেন। তাদের প্রার্থী ছাড়া অন্যরা যাতে পরীক্ষা দিতে না পারেন, সেজন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন।  

ছাত্রলীগের নেতাদের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী এলেই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসীয়ূর রহমান হলের ৩০৪ ও ৩০৯ নাম্বার কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে পরীক্ষা শেষে ৬ ঘণ্টা পর ভুক্তভোগী প্রার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়।  

এ পরীক্ষায়  ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রার্থী ছাড়া কাউকে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

অপহরণের শিকার সোহান হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ইজিবাইক থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন আমাকে ডাকেন। ডেকে নিয়ে জানতে চান, পরীক্ষা দিতে এসেছি কি না। এর পর আমাকে শহীদ মসীয়ূর রহমান হলের ৩০৯ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে বলেন, ‘তোরা পরীক্ষা দিতে আসছিস, অ্যাডমিট কার্ড কোথা থেকে পাইলি?’ ওই কক্ষে আমিসহ ছয়জন পরীক্ষার্থী ছিলাম। হলের ৩০৪ নম্বর কক্ষ ও পাঁচতলার একাধিক কক্ষে আমরাসহ প্রায় ১৭ জনের মতো আটক ছিলাম।  

তিনি বলেন, ৩০৯ নম্বর কক্ষে জোরে চিল্লাচিল্লি করলে আমাকে মাথায় ও নাকে-মুখে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারেন তারা। আমার চেয়ে অন্য পরীক্ষার্থীদের অনেক বেশি মারধর করেন। তারপর সাড়ে তিনটার দিকে তারা শহরের পালবাড়ি নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে আসা হামজা রহমান বলেন, সাড়ে ৯টার দিকে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আসি। নামার সঙ্গে সঙ্গে একজন আমাকে ডাকলেন। এরপর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার লিফট চালানোর অভিজ্ঞতা আছে?’ তার পর ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে নিয়ে যান। এরপর কক্ষে ঢুকিয়ে আমাকে আটকে রাখা হয়। ফোন-কাগজপত্র সব ছিনিয়ে নেন।

তিনি বলেন, চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার আকুতি জানালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে একজন আমাকে বলেন, ‘তোর চাকরি বড়, নাকি জীবন বড়!’  

আরিফুল ইসলাম নামে ভুক্তভোগী এক প্রার্থীর অভিভাবক বলেন, সকালে আমার জামাই আরিফুলকে নিয়ে আসি। তখন কিছু ছেলে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের ভেতর থেকে আমার জামাইকে ক্যান্টিনের দিকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পাই। দীর্ঘক্ষণ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে আমি রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে অভিযোগ জানাই। পরে আমি উপাচার্য স্যারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।

অভিযোগ অস্বীকার করে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এ অপহরণের সঙ্গে জড়িত নয়। ছাত্রলীগ কখনোই নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমাদের কোনো কর্মী যদি পরীক্ষা দেন, তাহলে আমরা ভিসি স্যারকে জানাই। পরীক্ষার্থী যদি যোগ্য হন, তবে তাকে চাকরি দেওয়া হয় প্রশাসনিকভাবে। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা-ভিত্তিহীন।

বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, লিফট অপারেটর পদের চাকরি পরীক্ষা ছিল। সাড়ে ১২টার দিকে আমি জানতে পারলাম কিছু পরীক্ষার্থীকে হলে আটকে রাখা হয়েছে। পরে প্রভোস্টকে বিষয়টি দেখার জন্য পাঠাই এবং প্রভোস্ট আমাকে জানান সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।  

তিনি বলেন, দুপুরের পর ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী ও অভিভাবকরা আমার সঙ্গে দেখা করেন। তারা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা প্রাথমিকভাবে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। পরে বিকেলের দিকে এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে সিটি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করতে গেলে ছাত্রলীগের কিছু ছেলে ক্যামেরার হার্ডডিস্ক ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক।

তিনি আরও বলেন, আগামী শনিবার রিজেন্ট বোর্ডে সভা ডাকা হবে। সেখানে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপহরণ মামলা করা হবে।  

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঘটনা শুনেছি। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
ইউজি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।