কক্সবাজার: হরতাল অবরোধের কারণে প্রায় দুই মাস পর্যটকশূন্য থাকার পর বিজয় দিবসের ছুটিতে আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার। যে কারণে এখানকার প্রায় সাড়ে পাঁচশো হোটেল মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রায় ২০ সেবাখাতে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরেছে।
২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী বিচ কার্নিভ্যাল ও মেলা ছিল। এ সময় তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্রায় পাঁচ লাখ পর্যটক এসেছিলেন। এরপর ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপির ডাকে হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটনশিল্পে বিরুপ প্রভাব পড়ে। সাপ্তাহিক ছুটি এমনকি বিশেষ দিনেও অনেকটা নির্জীব ছিল পর্যটনকেন্দ্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ মাসের শুরু থেকে ধীরে ধীরে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। নিয়মিত বিমানও উঠানামা করছে। এতে অভিজাত হোটেলগুলোতে আগের চেয়ে পর্যটক বেড়েছে।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সৈকতের লাবণী,সুগন্ধা ও কলাতলী সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ঠাসা পর্যটক। পর্যটকরা নীল জলরাশিতে আনন্দ-উচ্ছাসে মেতেছে হাজারো পর্যটক। হঠাৎ পর্যটকের খরা কেটে উঠায় সৈকতপারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝেও প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরেছে।
কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক মো. শিহাব চৌধুরী বলেন, ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা শেষ। আর তাই কক্সবাজার আসা। পরিবার-পরিজন নিয়ে ট্রেনে করে আসার সুযোগ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার ভ্রমণে একটু বাড়তি মাত্রা যোগ হলো। বছরে অন্তত একবার আসা হলেও এর আগে সেই সুযোগ ছিল না। সবমিলে ভ্রমণ বেশ আনন্দ দায়কই মনে হচ্ছে।
সুযোগ পেলেই কক্সবাজার আসি। হাজার বার এলেও সমুদ্র দেখার সাধ মিটবে না বলে জানান কলেজছাত্রী সুরাই আকতার।
তিনি বলেন, গত বছর কলেজের পিকনিকে এসেছিলাম। এবার পরিবারের সঙ্গে এসেছি। খুব ভালো লাগছে।
সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করা সি সেইফ লাইফ গার্ডের কর্মী রহমত উল্লাহ বলেন, শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে হাজার হাজার পর্যটক পর্যটক সমুদ্রসৈকতে গোসলে নেমেছেন। আমরা তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে পর্যটকেরা দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের দিকে ছুটে যাচ্ছেন। কেউ কেউ যাচ্ছেন মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধপল্লি, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ও নিভৃতে নিসর্গসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে।
শৈবাল ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় কয়েকমাস ধরে পর্যটক নেই বললেই চলে। তবে এ মাসে যেভাবে হোটেল কক্ষ বুকিং হচ্ছে,তাতে ভালো পর্যটক আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে সময়টা খুবই মন্দা গেছে। অনেকটা পর্যটকশূন্য ছিল।
শুক্রবার হঠাৎ পর্যটক বেড়েছে। এতে গত দেড় মাস ধরে লোকসান থাকা পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে।
কক্সবাজার শহর ও আশপাশের পর্যটন এলাকায় পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রেস্টহাউস ও রিসোর্ট রয়েছে। এতে অন্তত ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটক থাকার সুবিধা রয়েছে। হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের সমিতির সমন্বিত মোর্চা ‘ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ হোটেল কক্ষ বুকিং হয়েছে। দেড় থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যেও মাঝারিমানের হোটেলের কক্ষ পাওয়া যাচ্ছে।
পর্যটকের এই ঢলে কেউ যাতে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে না পারে তার জন্যে মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন,পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানে ট্যুরিস্ট পুলিশ সজাগ রয়েছে।
পর্যটকেরা নিরাপদ ভ্রমণ শেষে যেন নিরাপদভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সেজন্য ইতোমধ্যে ছয়টি টহল টিম কাজ করছে বিভিন্ন পয়েন্টে। এছাড়াও সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬,২০২৩
এসবি/এএটি