ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পোড়াদহ মেলায় বাঁশ-বেত সামগ্রীর পসরা

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
পোড়াদহ মেলায় বাঁশ-বেত সামগ্রীর পসরা

বগুড়া: প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী মেলা ‘পোড়াদহ’। প্রায় চারশ বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পোড়াদহ মেলাজুড়ে ছিল মানুষের ভিড়। বড়-বড় মাছ, মিষ্টিসহ নানান সামগ্রী নিয়ে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন দোকান। মেলার এক প্রান্তে শোভা পায় গ্রামীণ ঐতিহ্যর বাঁশ ও বেতের তৈরি নানান সামগ্রী।

মেলা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। সেই ঐতিহ্য ধারণ করে এই এলাকায় সবাই মেতে ওঠেন বাঁধভাঙা উৎসব-উচ্ছ্বাসে। মেলা উপলক্ষে এ এলাকায় উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনরা মিলে এ উৎসব করেন। আর ‘পোড়াদহ’ মেলাটি সেই আনন্দ ও উচ্ছ্বাস আরও একধাপ যেন বাড়িয়ে দেয়।

এবার মেলার পশ্চিম-উত্তর দিকে বসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাঁশ ও বেতের তৈরি নানান সামগ্রীর পসরা। এগুলোর মধ্যে আছে বাঁশ ও বেতের তৈরি ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের কুলা, চাক ডালা, চাল মাপার কাটা, খৈ চালনা, দাঁড়িপাল্লা, চালুন, মুরি চালনা, চাঁটাই, ডুলি, হাতপাখা, খালুই, সাঁজি, ফুলের ঝড়া, আমডালা, মোড়া, খাঁচাসহ নানান সামগ্রী।

শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের বীরগ্রাম থেকে আসা এক বিক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, পোড়াদহ মেলায় অনেক দূর থেকে আসেন। বাঁশ ও বেতের তৈরি গ্রামীণ সামগ্রী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। আধুনিক যুগে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবুও বাপ-দাদার শিখিয়ে যাওয়া এ সামগ্রী বানানো ও বিক্রিই তার পেশা। এ মেলায় এই সামগ্রীগুলো বিক্রি করেন তিনি। অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এখানে আসেন একটু বিকিকিনির আশায়। এ মেলাতে বিক্রি ভালোই হয়।

বিক্রেতা শামসুল আলম বাংলানিউজকে জানান, বর্তমান বাজারে বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিকের নানা দ্রব্যের সহজলভ্যতা অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে এ শিল্পকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অনেকেই পেশা বদলের চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, বাঁশের ও বেতের তৈরি এসব সামগ্রীর মধ্যে বড় কুলা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকা, মাঝারি কুলা ১০০ টাকা, খৈ-চালনা ১৫০-২০০ টাকা, চাক ডালা ২০০ টাকা, দাঁড়িপাল্লা ৬০০-৯০০ টাকা, চাল মাপার কাটা ১৫০-২০০ টাকা।

মেলায় আসা ক্রেতা মইন আহাম্মেদ, সালাম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, মেলা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। মেলায় বাঁশের কুলা, চাল মাপার কাটা, খৈ-চালনা ইত্যাদি নানান সামগ্রী পাওয়া যায়। যা ঐতিহ্য বহন করে। যেহেতু এগুলো সচরাচর চোখে পরে না তাই পোড়াদহ মেলা থেকে তারা এগুলো সংগ্রহ করছেন। অনেক বছর আগে বাঁশ-বেত শিল্পের প্রসার ঘটে। শিল্পীরা তাদের সুনিপুণ হাতে তৈরি করে আসছেন পরিবেশবান্ধব নিত্য প্রয়োজনীয় এসব সামগ্রী। তবে যুগের সঙ্গে এসব পণ্য ব্যবহারে মানুষ পরিবর্তন এনেছেন।

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ’ মেলায় বাঙালির হাজার বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যবহনকারী বাঁশ ও বেতের তৈরি এ সামগ্রীগুলোর দেখা মিলে প্রতি বছরই। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেক পরিবার এখনো পেশা হিসেবে বাঁশ ও বেতশিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছে। আর এ কারণেই বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ’ মেলায় প্রতি বছরই দেখা মেলে বাঙালির হাজার বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যবহনকারী বাঁশ ও বেতের তৈরি নানান সামগ্রী।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।