ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টনসিল অপারেশনে গিয়ে লাইফ সাপোর্ট শিশু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪
টনসিল অপারেশনে গিয়ে লাইফ সাপোর্ট শিশু

চাঁদপুর: জেলার ফ্যামিলি কেয়ার হাসপাতাল ও হেলথ কেয়ার ফিজিওথেরাপি সেন্টারে টনসিল অপারেশন করতে গিয়েছিল তাহসিন আক্তার নামে ১০ বছর বয়সী এক শিশু। সুস্থ হওয়ার বদলে সে এখন দিন কাটাচ্ছে ঢাকার একটি হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে।

ঘটনাটি গোপন থাকলেও এক সপ্তাহ পর এসে তা প্রশাসনের নজরে আসে। এতে নড়েচড়ে বসে চাঁদপুরের প্রশাসন। অবশেষে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চাঁদপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হেদায়েত উল্লাহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

তিনি বলেন, শহরের ফ্যামিলি কেয়ার হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানে গিয়ে সেখানে বেশ কিছু গাফিলতি দেখা যায়। বিশেষ করে ব্লাড ব্যাংক না হওয়া সত্ত্বেও তাদের ফ্রিজে এক ব্যাগ ব্লাড সংরক্ষণ করতে দেখা যায়।

এক্সরে রুম ওটি রুমসহ অন্যান্য রুম অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। সার্বিক বিবেচনায় হাসপাতাল পরিচালককে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ ও আদায় করা হয় বলে জানান তিনি।

অভিযানে প্রসিকিউশন কর্মকর্তা ছিলেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডাক্তার মো. সাখাওয়াত। এতে সহযোগিতা করে সদর মডেল থানা পুলিশের একটি চৌকস দল।

জানা গেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের রালদিয়া গ্রামের প্রবাসী মো. সবুজ খানের মেয়ে তাহসিন টনসিলজনিত সমস্যার জন্য চাঁদপুরের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এএইচএম ফেরদৌস নূরকে (কাউছার) তার চেম্বারে দেখায়।  

চিকিৎসকের পরামর্শে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ওই হাসপাতালে শিশুটির টনসিল অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পরে জটিলতা দেখা দিলে বিষয়টি গোপন রেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই শিশুকে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের আইসিইউর লাইফ সাপোর্টে রাখে। বর্তমানে ওই শিশু জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে বলে জানা গেছে।

ঘটনার পর ওইদিনই চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) করেন শিশুটির চাচা মো. ফরহাদ খান। জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন থানার এসআই আজাদ। জিডির পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিলেও অপারেশন ও অ্যানেসথেসিয়ার দায়িত্বে থাকা ডা. ফেরদৌস নূর ও ডা. আবির কোনো খোঁজ নেননি। উল্টো রোগীর স্বজনরা তাদের খুঁজে পাচ্ছেন না চেম্বার ও মোবাইল ফোনে।

তাহসিনের পরিবারের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসা, অবহেলা, অসচেতনতা ও দায়িত্বহীনতায় অপারেশন টেবিলেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, শ্বাসনালীতে রক্ত ও লালা ঢুকে পড়ায় রোগীর অবস্থা গুরুতর সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া অ্যানেসথেসিয়ার ওভারডোজ প্রয়োগেরও লক্ষ্মণ ছিল বলে ঢাকার চিকিৎসক তাদের জানান।

অভিযোগ, অপারেশনের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়ে অপারেশন করা এবং অজ্ঞানের ওষুধ যথাযথ পরিমাণে প্রয়োগ না করায় শিশুটির জীবন এখন সঙ্কটাপন্ন। এ ধরনের অপারেশনের জন্য ‘বিটিসিটি’ টেস্ট বাধ্যতামূলক হলেও তাহসিনের অপারেশনের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।  

চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজাদ বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টির ব্যাপক তদন্ত চলছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্তশেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪
আরএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।