ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভোটার হতে গেলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৪
ভোটার হতে গেলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ সালথা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আব্দুর রশিদ

ফরিদপুর: ভোটার হতে হলে আবেদনকারীদের থেকে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ শেখের বিরুদ্ধে।  

অভিযোগ, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার হস্তান্তরসহ সব কাজই টাকার বিনিময়ে করেন আব্দুর রশিদ।

যারা টাকা দিতে পারেন না, মাসের পর মাস ঘুরেও ভোটার তালিকায় তাদের নাম ওঠে না।  

শুধু তাই নয়, নারী সেবাপ্রত্যাশীদের পেলে অসদাচরণ ও হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  

ফলে ভোটার হওয়া থেকে অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

একটি ভিডিওতে ওই নির্বাচন অফিসের প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের চিত্র দেখা গেছে।  

এর আগে, নির্বাচন অফিসারের এসব ঘুষ-বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যে কারণে বর্তমানে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগে ও নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি সালথায় যোগদান করেন নির্বাচন অফিসার মো. আব্দুর রশিদ। তিনি যোগদানের পর থেকে নির্বাচন অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে নানা কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।  

অন্যদিকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ৫ রোহিঙ্গাকে ভোটার বানাতে গিয়েছিলেন আব্দুর রশিদ। পরে ইউএনওর হস্তক্ষেপে ওই পাঁচ রোহিঙ্গার ভোটার আবেদন বাতিল করা হয়।

সম্প্রতি নির্বাচন অফিসে ভোটার হতে এসে হেনস্তার শিকার হন উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহপ্রতাপ গ্রামের আজিজ ব্যাপারীর মেয়ে আমেনা আক্তার।  

গত ৩ মার্চ সকালে তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম। যে কারণে ভোটার হতে পারিনি। দেশে এসে গত পাঁচমাস আগে ভোটার হওয়ার জন্য আমি নির্বাচন অফিসে আবেদন করি। কিন্তু অফিস থেকে বিভিন্ন অজুহাতে আমাকে শুধু ঘোরাতে থাকে।

তিনি আরও বলেন, আমি বিষয়টি নির্বাচন অফিসারকে জানাতে গেলে তিনি প্রথমে আমাকে বলেন, বোরকা খুলে মুখ বের করেন। মুখ খোলার পর তিনি আমার চেহারার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকেন। বলেন, মেয়েরা অনেক চালাক। আপনার কাগজপত্রে ঝামেলা আছে। কালকে আসেন। কালকে গেলে বলে পরদিন আসেন। আর আমি অফিসে গেলেই আজে-বাজে কথা বলতে থাকেন। একপর্যায় আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। ওই টাকা আমি দিতে রাজি না হওয়ায় আমাকে ভোটার বানাবেন না বলে জানিয়ে দেন নির্বাচন অফিসার। ওনার আচরণে মনে হয়েছে, মেয়েদের পেলেই তিনি এমন আচরণ করেন।  

ঝুনাখালি গ্রামের পাঞ্জু শেখ বলেন, আমার শ্যালক ইকবাল মাতুব্বরের এনআইডি কার্ড করতে গেলে নির্বাচন অফিসারের কথা বলে অফিসের কর্মচারী সাইফুল ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে বাধ্য হয়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে শ্যালকের এনআইডি কার্ড করেছি। একইভাবে জয়ঝাপ গ্রামের মো. রাব্বী মোল্যা ইমার্জেন্সি ভোটার হতে চাইলে অফিসের কর্মচারী মো. কায়েস শেখ তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। বড় খারদিয়া গ্রাম থেকে নতুন ভোটার হতে আসা মো. ফারহান মিয়ার কাছেও পাঁচ হাজার টাকা দাবি করা হয়।

একাধিক সেবাপ্রত্যাশী জানান, ভোটার হওয়ার জন্য ভোটারপ্রতি আমরা ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছি। কিন্তু আমাদের এনআইডি কার্ড এখনো বের হয়নি। কেউ কেউ টাকার বিনিময় জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন। আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। তাই নাম প্রকাশ করলে নির্বাচন অফিস থেকে ঝামেলা বাঁধাবে।

সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া বলেন, সালথা নির্বাচন অফিস এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আমার ইউনিয়নের কেউ ভোটার হতে গেলে টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে ভোটার হতে পারে না। যে কোনো কাজে গেলেই টাকা ছাড়া করে না। এমন ঘুষখোর নির্বাচন অফিসার জীবনেও দেখিনি। আমি এই নির্বাচন অফিসারের অপসারণ দাবি করছি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সালথা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ওই নারীর সঙ্গে আমার একদিন দেখা হয়েছে। তার আচরণ মোটেও ভালো না। তিনি ৪০ বছর বয়সে ভোটার হতে এসেছেন। তাই আমি তার মুখ দেখতে চেয়েছি। কারণ, এর আগে রোহিঙ্গারা ভোটার হতে এসেছিল। তখন ঝামেলায় পড়েছিলাম। ওই নারীর সঙ্গে কোনো ধরনের আজে-বাজে কথা হয়নি।  

সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয় তিনি আরও বলেন, কারো কাছ থেকে অফিসের কেউ টাকা নিলে, সেটা আমি জানি না। আমার অফিসে কোনো ধরনের ঘুষ লেনদেন হয় না।

এব্যাপারে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালী বাংলানিউজকে বলেন, ওই নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এছাড়া প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেন নেওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে ইউএনও বলেন, এব্যাপারে ওই কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে ডাকা হয়েছিল। এটা তার অফিসের কি-না জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া আমরা ভিডিওটি খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

এব্যাপারে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়াসীন কবীর বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে দেখব।

তিনি বলেন, যেহেতু ওই নির্বাচন কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের অধীনে চাকরি করেন। তাই বিষয়টি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনকে জানাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।