ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘কারেন্ট জালের উৎপাদন স্থান চিহ্নিত করে নির্মূল করতে হবে’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
‘কারেন্ট জালের উৎপাদন স্থান চিহ্নিত করে নির্মূল করতে হবে’

চাঁদপুর: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহমান বলেছেন, জেলেদের কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরার একটি বিষয় রয়েছে। এ বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবেও খুবই ব্যথিত।

পাগলেও তো নিজের বুঝ বুঝে।  

এই কারেন্ট জাল দিয়ে সবেমাত্র ভূমিষ্ঠ হওয়া মাছের সন্তান তাকে যদি ধরেন, তাহলে এই মাছ তো বড় হতে পারবে না। বড় মাছ আমরা আর কোনোদিন চোখে দেখবো না। তাই এই কারেন্ট জাল সমূলে উৎপাটিত হওয়া দরকার। কারেন্ট জালের যে উৎস মুখ, যেখান থেকে এই জাল তৈরি হয়, ওই জায়গাটাকে চিহ্নিত করে নির্মূল করতে হবে।  

কারেন্ট জাল যেখান থেকে তৈরি হয়, ওই জায়গা ভেঙে চুরমার করে দিতে হবে। আর এটি প্রশাসনকেই করতে হবে। এটি বন্ধ করতে পারলে কোনো জেলের এই জাল নিয়ে নদীতে নামার সুযোগ থাকবে না। সুতরাং এ বিষয়ে আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মূলহেডে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৪ উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম, ইলিশকে নিরাপদ রাখবার জন্য, বিশেষ করে মা ইলিশকে বাঁচাবার জন্য এবং জাটকা নিধন বন্ধের জন্যই চাঁদপুরে আসা। অভিযানকালীন আমরা যদি মা ইলিশ রক্ষা না করি, তাহলে আমরাই (জেলেরা) বিপদে পড়বো। মা ইলিশ রক্ষার জন্য বড় ভূমিকা জেলেদের। দেশের সর্বশেষ আপডেট হচ্ছে ৫ লাখ ৭১ হাজার মৎস্যজীবীদের তালিকা আছে। আমি এই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বলবো আপনারা এই তালিকাটি সঠিকভাবে প্রণয়ন করেন এবং এই মৎস্য জীবিকার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের একটি নামও যেন এই তালিকা থেকে বাদ না যায়, সেই ব্যবস্থা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের ভরসাস্থল হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের মমতাময়ী মা।

মন্ত্রী বলেন, জাতীয় রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বড় একটি চ্যালেঞ্জ এবং বড় একটি হুমকির মোকাবিলা করে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আজকে তিনি এ দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার স্থিতিশীল পর্যায় নিয়ে এসেছেন। আপনারা সবাই জানেন ৭ জানুয়ারি একটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনের আগে অনেক নিন্দুকেরা এবং তাদের বিদেশি প্রভুরা বলেছিল এ দেশে শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তাদের মুখে ছাই দিয়ে শেখ হাসিনাই প্রমাণ করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার অধীনে এবং কেবল মাত্র তার অধীনেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। গত ৭ জানুয়ারির দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচনই তা প্রমাণ করে।

তিনি বলেন, এই দেশ বাঁচাতে হলে, শেখ হাসিনাকে বাঁচতে হবে। আর শেখ হাসিনাকে বাঁচতে হলে এই দলকে বাঁচতে হবে এবং সু-সংগঠিতভাবে বাঁচতে হবে। শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার কারণে আমরা সব ধরনের সংকট ও দুর্যোগ থেকে মুক্তি পেয়েছি।

মন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা যে জাটকা রক্ষা সপ্তাহ পালন করছি। আমাদের ইলিশের উৎপাদন ক্ষমতা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, এর থেকে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তুলনা করি, তাহলে আজকে নিঃসন্দেহে বলতে পারি প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন বাংলাদেশের অর্জিত হয়েছে, তা কেবল মাত্রই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে।

আব্দুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমার মাটি আমার মানুষ, আমার পাট আছে, আমার সম্পদ আছে এবং আমার ইলিশ আছে। আর এই ইলিশেই হতে পারে দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় উপাদান। যথার্থভাবে আজ থেকে বহুদিন আগে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে এ কথা বলেছিলেন। যার বাস্তব ও প্রয়োগিক ফলাফল ধীরে ধীরে এই জাতি আজকে উপভোগ করছে।

মন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের বলতে চাই-বঙ্গবন্ধু এই দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য নিরন্তর কাজ করেছেন। ১৯৮১ সালে তার কন্যা শেখ হাসিনা বাবা-মা হারানোর ব্যথা ও অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে এই বাংলার মাটিতে এসেছেন। সেদিন লাখ লাখ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেছেন আমার বাবা ঘাতকের বুলেটে জীবন দিয়ে গেছেন। তার বুকের তাজা রক্তে এই পদ্মা-মেঘনা ও যমুনার কালো পানি লালে লাল হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র নৌপুলিশ, ডিসি এবং এসপিকে দিয়ে জাটকা রক্ষা হবে না। আমাদের নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। এই জাটকা রক্ষা সপ্তাহ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতে হবে। আমাদের এই জাটকা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে ভরা যৌবনের চাঁদপুর আবার ইলিশের যৌবনে ভরে যাবে এই কথা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন, সেখানে এই ইলিশের উৎপাদন সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এটি আমি আশা করি এবং বিশ্বাস করি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন-মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীর।

সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন- চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান, হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন শান্ত ও জেলা মৎস্যজীবী লীগ নেতা শাহ আলম মল্লিক।

অনুষ্ঠানে কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, মৎস্য দপ্তরসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, মৎস্যজীবী নেতাসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে শহরের মোলহেড থেকে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ সংশ্লিষ্টদের অশংগ্রহণে মেঘনা নদীতে নৌ র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ শত শত মৎস্যজীবী অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।