ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লিবিয়া থেকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৪
লিবিয়া থেকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

জয়পুরহাট: লিবিয়ায় হাত-পা বেঁধে ও মুখে কাপড় গুঁজে বাংলাদেশি এক যুবককে নির্যাতনের ভিডিও স্বজনদের কাছে পাঠিয়েছে একটি মানবপাচার চক্র। সেই সঙ্গে চক্রটি মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করছে ১০ লাখ টাকা।

জানা গেছে, দুই মাস আগে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় যাওয়া রুবেল হোসেন নামে এক যুবককে সেখানকার একটি শহরের অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয়েছে। তার হাত-পা একসঙ্গে বেঁধে ও মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে লাঠি দিয়ে বেদম পেটাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। এমন নির্মম নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশে রুবেলের স্ত্রীর বড় বোন আক্তারুনের মুঠোফোনে পাঠানো হয়েছে। ওই ভিডিও পাঠিয়ে রুবেলের মুক্তিপণের জন্য আক্তারুনের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার রুবেল হোসেনের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার আমেশ্বপুর নিশিপাড়া গ্রামে। রুবেলকে লিবিয়ায় পাঠানো দালাল মিজানুর রহমান ওরফে ধলুর বাড়ি তেমারিয়া গ্রামে।

রোববার (৩১ মার্চ) বিকেলে তেমারিয়া গ্রামে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আক্তারুন তার ছোট বোনের স্বামী রুবেল হোসেনকে গ্রামের দালাল মিজানুর রহমান ও তার বাবা আবদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর রুবেল নিজেই দালাল মিজানুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে রুবেল তার বাড়ি ভিটা বিক্রি করে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দালাল মিজানুরের স্বজনদের হাতে দিয়েছিলেন। গত জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রুবেল লিবিয়ায় পাড়ি জমান।

নির্যাতনের শিকার রুবেলের স্ত্রীর বড় বোন আক্তারুন বলেন, রুবেলকে লিবিয়ায় নিয়ে বসিয়ে রেখেছিলেন দালাল মিজানুর। রুবেলকে ভালো কাজ দেওয়ার কথা বলে ১০ দিন আগে লিবিয়ার আরেকটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অচেনা কণ্ঠের একজন বাংলাদেশি লিবিয়া থেকে আমাকে ফোন করে রুবেলের মুক্তিপণের জন্য ১০ লাখ টাকা চেয়েছেন। তা না দিলে রুবেলকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। পরে ২৭ মার্চ আমার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিও এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ঘরে রুবেলকে আটকে রেখে হাত-পা একসঙ্গে বেঁধে ও মুখে কাপড় গুঁজে লাঠি দিয়ে তাকে মারধর করা হচ্ছে। এ সময় রুবেলকে গোঙাতে শোনা যাচ্ছে। এ ঘটনার পর লিবিয়ায় থাকা দালাল মিজানুরকে ফোন করে তাকে পাইনি। ঘটনার পর থেকে মিজানুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। মিজানুরের বাড়িতে গিয়ে তার মা-বাবাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

গ্রামবাসী ও প্রতিবেশীরা বলেন, দালাল মিজানুর সৌদি আরব গিয়েছিলেন। সেখানে ১০ বছর থাকার পর তিন বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। তিনি গ্রামের বাড়িতে মৎস্য চাষ ও মুরগির খামার শুরু করেন। দেড় বছর আগে তিনি লিবিয়ায় চলে যান। এরপর মিজানুর লিবিয়ায় লোকজন নিয়ে যেতে শুরু করেন। মিজানুরের বাবা আবদুর রহমান ও ছোট ভাই শাহিন ঘুরে ঘুরে লিবিয়ায় পাঠানোর জন্য লোক সংগ্রহ করতেন। লিবিয়ায় চট্টগ্রামের আনোয়ারার চার তরুণকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন স্থানের লোক মিজানুরের বাড়িতে আসতে শুরু করেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে ২০-২৫ জন অপরিচিত ব্যক্তি আটটি মোটরসাইকেল নিয়ে মিজানুরের বাড়িতে আসেন। তারা মিজানুরের ছেলে রমিমকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। ওই দিন রাতেই স্বজনেরা দৌড়ঝাঁপ করে মিজানুরের ছেলেকে ফেরত নিয়ে আসেন। গত শুক্রবার সকালে বাড়ির মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে মিজানুরের মা-বাবা ও ভাই অজ্ঞাতস্থানে চলে গেছেন।

তেমারিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এক নারী কর্মী দুলালি এবং গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য ফজিলাতুন নেছা বলেন, কয়েক দিন ধরে মিজানুরের খোঁজে লোকজন বাড়িতে আসছেন। ভয়ে মিজানুরের পরিবারের সদস্যরা কেউ বাড়িতে থাকছেন না। মিজানুর অনেক মানুষকে লিবিয়ায় নিয়ে গেছেন। এখন শুনছেন মিজানুর লিবিয়ায় লোকজন আটকে মুক্তিপণ চাচ্ছেন।

তেমারিয়া গ্রামের হাফিজার রহমান বলেন, দুই সপ্তাহ আগে মিজানুর আমার ছেলেকে লিবিয়ায় নিয়ে গেছে। এখন আমরা ছেলের সন্ধান পাচ্ছি না। আমরা সবাই চিন্তিত।

শুধু রুবেল হোসেনই নয়, ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা সুমনসহ বিভিন্ন এলাকার মোট ১২ যুবককে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মিজানুরের বিরুদ্ধে। জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম বলছেন- এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে জোরালোভাবে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মিজানুরের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তারের জন্য হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।