কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় কেবলমাত্র লাইসেন্সবিহীন অনটেস্ট মোটরসাইকেল জব্দ করে জেলা পুলিশের মাসিক আদায় কোটি টাকার বেশি।
কুষ্টিয়া জেলা ট্রাফিক অফিস সূত্র বলছে, অক্টোবর-২০২৩ থেকে ৩ এপ্রিল-২০২৪ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৮০০ মোটরসাইকেল জব্দ করে কুষ্টিয়া জেলা ট্রাফিক পুলিশ।
এর মধ্যে লাইসেন্সবিহীন অনটেস্ট মোটরসাইকেল (বাইক) রয়েছে সাত শতাধিক।
বিধিমতে জব্দ করা মোটরসাইকেলের মালিকরা লাইসেন্সসহ প্রাসঙ্গিক আইনসিদ্ধ কাগজপত্র তৈরি করে পুলিশের কাছে উপস্থাপন করে নির্ধারিত জরিমানার টাকা পরিশোধ করে জব্দ মোটরসাইকেল ফেরত পাওয়ার আবেদন করবেন। আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্র সঠিক থাকলে পুলিশ হেফাজতে থাকা বাইকটি আবেদনকারীকে ফেরত দেওয়া হয়। এছাড়া পুলিশ হেফাজত থেকে জব্দ মোটরসাইকেল মুক্ত করার বৈধ অন্য কোনো বিধান নেই।
অভিযোগ উঠেছে, কুষ্টিয়া জেলা ট্রাফিক পুলিশ অফিসের কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক টিআই-ওয়ান ফকরুল ইসলামের যোগসাজশে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে জব্দ মোটরসাইকেল মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। ট্রাফিক অফিসের ‘ফকরুল গং’ একটি ভুয়া অফিসিয়াল ডেটা শিট প্রস্তুত করে সেখানে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া মোটরসাইকেলগুলোর বিপরীতে একটি করে ভুয়া নম্বর সংযোজন করে তার বিপরীতে মামলার ধরনের ভিত্তিতে আড়াই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারিত জরিমানা টাকা পরিশোধ দেখানো হয়। ওই ডেটা শিটে ব্যবহৃত ভুয়া নম্বরগুলো কুষ্টিয়া ল-০০-০০০ বা কুষ্টিয়া-হ- ০০-০০০২১২ ইত্যাদি জাতীয় নম্বর ব্যবহার করে তার বিপরীতে কেস ফাইলিং দেখিয়ে নির্ধারিত জরিমানার টাকা পরিশোধ দেখিয়ে ফাইলপত্র প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। তবে এ জাতীয় নম্বরের বৈধতা নাকচ করে কুষ্টিয়া বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব নম্বরের কোনো ভিত্তি নেই, এগুলো ভুয়া নম্বর।
এদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিসের টিআই-ওয়ান পুলিশ পরিদর্শক ফকরুল ইসলাম।
কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ছয় মাসে জেলা সদরসহ সাতটি থানা এলাকায় এক হাজার ৮০০টি বাইকের লাইসেন্স না থাকাসহ নানা অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়। টিআই ওয়ানের নেতৃত্বে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সবুর ৩১৩টি, এসআই সুব্রত কুমার গাইন ২৯০টি, সার্জেন্ট রাসেল আহমেদ ২৮০টি, সার্জেন্ট আমিরুল ইসলাম ২৪৫টি, সার্জেন্ট মোস্তাক আহমেদ ২৩২টি, সার্জেন্ট মিজানুর ১৯৪টি, সার্জেন্ট নুরে আলম ১৩২টি এবং সার্জেন্ট এইচ এম সাজিদ হোসাইন-১১৭টি মামলা করেন।
কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ গ্রামের হায়দার আলীর অভিযোগ করে বলেন, গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি কুষ্টিয়ার মজমপুর এলাকা থেকে ট্রাফিক পুলিশ আমার লাইসেন্সবিহীন অনটেস্ট মোটরসাইকেল জব্দ করে। কোনো কাগজপত্র বা রিসিট না দিয়েই আমাকে মজমপুর ট্রাফিক অফিসে যোগাযোগ করতে বলে পুলিশ। পরে সেখানে গেলে দেখতে পাই মুন্সির টেবিলে লাইন ধরে লোকজন টাকা দিচ্ছে। কোনো রিসিট ছাড়াই প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আমিও টাকা দিলাম গাড়ি ছাড়ানোর জন্য, কিন্তু রিসিট চাওয়ায় মুন্সিসহ ওই অফিসের আরও তিন/চারজন পুলিশ আমার ওপর চরম ক্ষেপে যান এবং আমার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে অফিস থেকে বের করে দেন। পরে আমর বাইকটি ছাড়িয়ে এনে রাগে ক্ষোভে দুঃখে আমার বাইকটি আবার শো-রুমে ফেরত দিলাম। উনারা টাকাও নেবেন আবার দুর্ব্যবহার করাটাও নিত্যদিনের ঘটনা।
পুলিশের তালিকায় সংযোজিত ওইসব নম্বর যাচাই করতে কথা হয় কুষ্টিয়া বিআরটিএ’র মোটর যান পরিদর্শক কতুব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কেবলমাত্র ০০ দিয়ে যে নম্বরগুলো এ তালিকায় দেখা যাচ্ছে, এসব নম্বরের কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো ভুয়া নম্বর।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিসের টিআই-ওয়ান পুলিশ পরিদর্শক ফকরুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্সবিহীনসহ নানা কারণে জব্দ করা মোটরসাইকেল কোনোভাবেই টাকা পয়সার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) পলাশ কান্তি নাথ অভিযোগ নাকচ করে বলেন, এসব নম্বরকে ভুয়া নম্বর বলার কোনো সুযোগ নেই। কারণ পুলিশ যখন কোনো নম্বর বিহীন গাড়ি জব্দ করে, তখন সেসব গাড়ির মামলা দিতে হলে আমাদের ব্যবহৃত সফটওয়্যারে এন্ট্রি করার ক্ষেত্রে যে কোনো একটি নম্বর ব্যবহার করতে হয়। এখানেও সেটাই করা হয়েছে। তাছাড়া টাকা পয়সার বিনিময়ে বৈধ কাগজপত্রসহ নির্ধারিত জরিমানা পরিশোধ ব্যতীত জব্দ কোনো গাড়ি অবমুক্ত করার কোনো বিধান নাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৪
এসআই