ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০১ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

নিরুপায় হয়ে ধান কাটতে বাইরের জেলায় যাচ্ছেন শ্রমিকরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
নিরুপায় হয়ে ধান কাটতে বাইরের জেলায় যাচ্ছেন শ্রমিকরা

নীলফামারী: এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মেয়ের বিয়েতে ডিসকভার মোটরসাইকেল দিয়েছেন দিনমজুর জয়নাল আবেদীন (৫৫)। টাকা না কুলায় ছোট ছেলের বিয়ে দিয়ে যৌতুক নিয়ে মেয়ের বরকে দিয়েছেন।

ফলে তার কষ্টে কাটছে জীবন। বাধ্য হয়ে আগাম ধান কাটতে দলের সঙ্গে দক্ষিণের জেলায় ছুটছেন তিনি।  

জয়নাল আবেদীনের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুরের কামারপুকুর ইউিনিয়নের দলুয়া চৌধুরীপাড়ায়। ১৪ জনের দলের সঙ্গে ট্রেনের অপেক্ষা করছেন সৈয়দপুর রেলস্টেশনে। তার মতো অনেক শ্রমিক এসেছেন, ট্রেন ধরে যাবেন গন্তব্যে। কেউ এসেছেন রংপুরের তারাগঞ্জ, দিনাজপুরের রানীরবন্দর, খানসামা, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ, ডিমলা, জলঢাকা এলাকা থেকে।  

চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা রূপসা, বরেন্দ্র, খুলনা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেকে পার্বতীপুর জংশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনে চেপে কাজের সন্ধানে ছুটছেন।

স্টেশনে কথা হয় ১২ জন শ্রমিকের দলনেতা আব্দুর রহমানের (৫৫) সঙ্গে।  

তিনি জানান, প্রতিবছর আমরা আগাম ইরি-বোরো ধান কাটার জন্য নওগাঁ জেলায় যাই। সেখানে কৃষকের ধান কাটি এবং ধান মাড়াই করে দিই। তারা যেতে বলেছেন তাই আমরা দলবেঁধে যাচ্ছি।  

এ সময় আমাদের এলাকায় কাজ কম। সাংসারিক খরচ ও এনজিওর কিস্তির জ্বালায় বাড়িঘর ছেলে-সন্তানের মায়া ছেড়ে কাজে যেতে হচ্ছে।  

জেলার ডিমলা থেকে আসা সফেদ আলী (৫৭) জানান, এই জনপদের কৃষি শ্রমিকরা মূলত নওগাঁ, নাটোর, আত্রাই, সান্তাহার, রানীনগর, সিংড়া প্রভৃতি এলাকায় আগাম জাতের ধান কাটতে যায়।  

তিনি বলেন, প্রতিবছর আমরা দল করে কাজে যাই। আমাদের সঙ্গে দড়ি, কাস্তে, ভার বহনের বাংকুয়া আছে। কারো কারো আছে কম দামের মোবাইল ফোন। এর মাধ্যমে আমরা সবসময় বাড়ির খবর রাখি।

সৈয়দপুর রেলস্টেশনের বাইরে বসে থাকা কৃষি শ্রমিক সাদাকাত আলী (৬১) জানান, হামরা এইলা গরিব মানুষ। কাম করি ভাত খাই। হামার এত্তি ধানা কাটা দেরি আছে। তারজন্য হামরা সগাই (১০ জন) ধান কাটিবার জন্য বগুড়া জেলাত যাইছি। হামার এলার পেখে চেয়ারম্যান-মেম্বরও দেখে না। না খেয়ে থাকলে কাহো খবর নেয় না।  

সূত্র জানায়, গত প্রায় ৮/১০ দিন ধরে এই দিনমজুররা কাজে সন্ধানে ট্রেনে দক্ষিণের জেলাগুলেতে ছুটছেন। তারা প্রতিবছর ইরি-বোরো মৌসুমে কয়েক হাজার দিনমজুর দক্ষিণের জেলায় যান ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজে। আর অন্য যানবাহনে চেয়ে ট্রেনে খরচ কম পড়ায় তারা মূলত ট্রেনেই যাতায়াত করে থাকেন।  

এ সময় ট্রেনগুলোতে দিনমজুরদের চাপে প্রচণ্ড ভিড় হয়। অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদেও যান। অনেকেই আবার ট্রেনের টিকিট করে প্রচণ্ড ভিড়ে বগিতে উঠতে ব্যর্থ হয়। তখন আর তাদের কিছুই করার থাকে না। অপেক্ষায় থাকে পরের ট্রেনের।

সৈয়দপুর রেলস্টেশন মাস্টার ওবাইদুল ইসলাম রতন জানান, গত সপ্তাহখানেক ধরে দিনমজুরদের চাপে ট্রেনগুলোতে ভীষণ ভিড়। অনেকে ট্রেনের টিকিট কাটার পরও বগিতে উঠতে পারেন না। তখন আমাদের কাছে টিকিটের টাকা ফেরত চেয়ে  বসে।  

এ সময় আমরা কিছুই করতে পারি না তাদের জন্য। তবে দিনমজুররা সবাই ট্রেনের টিকিট কেটে ট্রেনের চড়েন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
এএটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।