ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতারণা-দালালি-ডাকাতিসহ বহু অভিযোগ

আওয়ামী লীগে পদ পেয়ে লাগামহীন শাহাদাত মোল্লা

অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৪
আওয়ামী লীগে পদ পেয়ে লাগামহীন শাহাদাত মোল্লা সাভার পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত মোল্লা

ঢাকা: জীবিকার তাগিদে গোপালগঞ্জ জেলা সদরের নিজরা পারকুল গ্রাম থেকে সাভারে এসেছিলেন শাহাদাত মোল্লা (৫০)। প্রথম প্রথম বেকার থাকলেও পরবর্তীতে গাবতলি বাস স্ট্যান্ডে কনডাক্টরের কাজ নেন।

অবসর সময়ে সাভার স্ট্যান্ডে এসে বাসে যাত্রী উঠিয়ে দিয়ে কমিশন নিতেন। এরপর শুরু করেন দালালি। ধীরে ধীরে রাজনীতির সঙ্গে জড়ান। এক পর্যায়ে বাগিয়ে নেন সাভার পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের পদ। এরপরই লাগামহীন হয়ে ওঠেন তিনি। জুয়ার আসর পরিচালনা, সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, এমনকি ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি এক ডাকাতির মামলায় সামনে আসে সাভার পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত মোল্লার নাম। মামলার পর থেকেই তিনি পলাতক।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পদ পেয়ে সাভার পৌরসভার বৌ-বাজার এলাকায় দলীয় অফিস গড়ে তোলেন শাহাদাত মোল্লা। আওয়ামী লীগের নামে করা ওই অফিসেই দিন রাত জুয়ার আসর চালান তিনি। সেখানেই শুরু করেন প্রতারণার কাজ। কাস্টমস অফিস, পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিতে শুরু করেন। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ভুক্তভোগীদের জিম্মি করেন। নিজের কার্যালয়ে বসেই করতেন ডাকাতির পরিকল্পনা। আরও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়ান শাহাদাত। সম্প্রতি ডাকাতির প্রস্তুতিতে দায়ের হওয়া মামলায় তিনি ৫ নম্বর আসামি।

ওই মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, গত গত ২৭ এপ্রিল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বনপুকুর এলাকার একটি বালুর গদির সামনে অভিযান চালায় সাভার মডেল থানা পুলিশ। অভিযানে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছে থেকে রাম-দা, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র জব্দ করা হয়। ওই অভিযানের সময় অপর দুই ব্যক্তি কৌশলে পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে একজন শাহাদাত। এ ঘটনায় তার নাম উল্লেখসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদাত মোল্লার প্রতারণার শিকারদের মধ্যে একজন মুরাদ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রায় ৫ বছর আগে তাকে কাস্টমসে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন শাহাদাত মোল্লা। নেন সাড়ে ১০ লাখ টাকা। চাকরি না পেয়ে তার কাছে অর্থ ফেরতের দাবি করেন মুরাদ। তাকে ৫ লাখ টাকার একটি চেক দেওয়া হয়। কিন্তু শাহাদাত চেকের টাকা পরিশোধ করেননি। আজ দিই, কাল দিই- এমন করে দীর্ঘদিন ঘুরিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

মুরাদ বলেন, শাহাদাতের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া ছিল। বিশ্বাসের খাতিরেই জমি বিক্রি করে তাকে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে নিঃশেষ করে দিয়েছেন। তার কাছে টাকা চাইলে তিনি কখনই টাকা দেবেন না বলেন না। তবে, অসুস্থতার দোহাই দিয়ে টালবাহানা করেন। তার অফিসে কাজী নাসির, শেখ সেলিম, ফকরুল আলম সমর, ফজলে শামস তাপসের ছবি টাঙানো রয়েছে। তৎকালীন কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ফজলে শাসম তাপস, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের খুব কাছের লোক বলে নিজেকে জাহির করতেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ভিডিও দেখাতেন তিনি। আব্দুর রাজ্জাক ও ওবায়দুল কাদেরের ডিও লেটার দেখিয়ে তিনি আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেন। ডিও লেটার আসল নাকি নকল তা জানি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক ভুক্তভোগী বলেন, পুলিশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে শাহাদাত মোল্লা আমার কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নেন সাড়ে তিন বছর আগে। চাকরির তো কোনো খবর নাই, এখন টাকাও ফেরত দেন না। টাকা চাইলেই টালবাহানা করেন। ‘আওয়ামী লীগের নেতা’ এই ক্ষমতা দেখিয়ে তিনি টাকাটা দিতে চাচ্ছেন না। আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। কোথায়, কার কাছে অভিযোগ জানাবো তাও বুঝতে পারছি না।

শাহাদাত মোল্লার কারণে নিজের মতো অসংখ্য ভুক্তভোগী রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে শাহাদাত হোসেন বহু লোকের কাছে টাকা নিয়েছেন। তিনি ১৮/২২ জনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এছাড়া তার অফিসে সারা দিন লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা চলে। তার বড় ছেলে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে যা ইচ্ছা তাই করে পরিবারটি।

এ ব্যাপারে সাভার পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোক্তার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ১০/১২ বছর আগে আমাদের কমিটি গঠন হয়। এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছে। শাহাদাত মোল্লার ব্যাপারটি পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেবেন।

বিষয়টি নিয়ে সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক মোল্লার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আপনার (সাংবাদিক) কাছেই শুনলাম। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাসান সিকদার বিষয়টি নিয়ে বলেন, ডাকাতির প্রস্তুতির সময় ৪ জনকে গ্রেপ্তারের পর আমরা আদালতে পাঠিয়েছি। মামলার অপর আসামি শাহাদাত মোল্লাসহ দুজন পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।