ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসান (খোকন)। তার ওই বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
আ.লীগ নেতা কামরুল হাসান বলেছেন, দুঃখজনক হলেও সত্য ভোটের আর পরিবেশ নাই। আমরা নষ্ট করে ফেলেছি ৷ একটা সময় ভোট ছিল উৎসবের মতো। ভোটারদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করতো। আর চায়ের কাপে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে যেত কে জিতবে কে হারবে এটা নিয়ে৷ এখন ভোটের ওপর মানুষের বিশ্বাস উঠে গেছে। সারা দিন দু-চারটা লোক ভোট দিতে যায়। সারা দিনে ভোট পড়ে আড়াই শ’ থেকে তিন শ’। কিন্তু বিকেল বেলা গণনার পর তা হয়ে যায় ৩ হাজার ১৬৬।
গত মঙ্গলবার (১৫ মে) উপজেলার রুহিয়া এলাকায় কয়েকটি নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেন কামরুল হাসান। রাতে রুহিয়া চৌরাস্তায় এক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
কামরুল হাসান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঠাকুরগাঁও পৌরসভা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য।
এছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ঠাকুরগাঁও সদর থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
কামরুল হাসান গত মঙ্গলবার উপজেলার রুহিয়া এলাকায় কয়েকটি নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেন। রাতে রুহিয়া চৌরাস্তায় তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক কম, সাড়া নাই। লোকলাক টানে নিয়েও ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাবা পারু না। এর কারণ ভোটের ওপর মানুষের যে বিশ্বাস, তা উঠে গেছে। সারা দিন দু–চারটা লোক ভোট দিবা যাছে। সারা দিনে সেন্টারলাত দুই শ, আড়াই শ, তিন শ ভোট কাস্ট হচে। কেন্দ্রত ভোটার আছে মনে করেন বাইশ শ, তেইশ শ, পঁচিশ শ না হয় তিন হাজার। বিকেলবেলা যখন প্রিসাইডিং অফিসার তামাম (গোটা) ব্যালট বাক্সলা এক করে গনাছে (গুনছে), সেলা (সে সময়) দেখা যাছে, ভোট কাস্ট হচে ৩ হাজার ১৬৬। এত ভোট কুনঠে (কোথা থেকে) থেকে আসিল। মিথ্যে চালাকি, ধান্দাবাজি আর চালবাজি করে হামরা ভোটটা করছু, এইতানে ভোটের প্রতি মানুষের আর আস্থা নাই। ভোট দিতে মানুষ যায় না। আমি আওয়ামী লীগ করি, এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য আমরাই নিজেরাই দায়ী মনে করি।
কামরুল হাসান আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। ১৫ বছর যাবৎ হামরা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় আছি। ভোট আসিলে হামার মতো ধান্দাবাজ লোকলা টাউন থাকে আসে মানুষের কাছে কহছে ভোট দেন, তামাম কাজ করে দিম। এমনভাবে গুছায় কহছে যে মনে হচে আকাশের চাঁদখান টানে নিচত নামায় দিবে। এলা নতুন সুর তুলিছে, হামাক ভোট না দিলে ভিজিডি কার্ড বাতিল করে দিবে। ভিজিডি কার্ড কি তোমার বাপের?’
রাজনীতি এখন টাকা কামানোর ব্যবসা হয়ে গেছে মন্তব্য করে কামরুল হাসান বলেন, ‘টাকা কামানোর তানে রাজনীতি হচ্ছে একখান ব্যবসা। যারা রাজনীতিকে নষ্ট করে ব্যবসায় পরিণত করেছে, তাদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে। আমরা যদি নির্বাচিত হই, কাউকে অযথা হয়রানি করা হবে না। মিথ্যে মামলা দেওয়া হবে না। এর মধ্যে যাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, সেসব মামলা প্রত্যাহারের জন্য আমরা কাজ করে যাব। ’
দলকে নিয়ে এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুল হাসান খোকন বলেন, ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে, আমি আওয়ামী লীগ করি বলে এটা তো অস্বীকার করতে পারি না। কেন্দ্রে ভোটার কেন আসছেন না, বিভিন্ন পথসভায় তা তুলে ধরে ভোটারের ক্ষোভ কমিয়ে এনে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করতেই এমন বক্তব্য দিয়েছি। এ বক্তব্য অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই। ’
ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে নির্বাচনী সভায় এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই আশা করা যায় না। এসব বক্তব্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। কামরুল হাসান যেন এমন বক্তব্য আর না দেন, এ বিষয়ে তাকে সতর্ক করা হবে। আর এরপরও এমন বক্তব্যের সত্যতা পেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচন হবে আগামী ২১। এ নির্বাচন কামরুল হাসানসহ চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। অন্য প্রার্থীরা হলেন - সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অরুণাংশু দত্ত, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার ও সহসভাপতি রওশনুল হক।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৪
এসএএইচ