ঢাকা: শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উন্মুক্ত বিতর্কে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিল্লি সফর নিয়ে মঙ্গলবার (জুন ২৫) সকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ওনাকে জেলাস (ঈর্ষা) করার কী আছে? সে আসুক না, মাঠে আসুক। চলুক আমার সঙ্গে। আমেরিকায় ডিবেট হয় না, আসুক, কথা বলব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা কারও সঙ্গে জেলাসি করে না। শেখ হাসিনা জাতির পিতার মেয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। অন্তত এই জায়গাটায় কেউ আসতে পারবে না। আর সেটাই আমার গর্ব। প্রধানমন্ত্রী তো একটা সাময়িক ব্যাপার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেশও বেচি না, দেশের স্বার্থও বেচি না। আমি সব সময় দেশের স্বার্থ রক্ষা করে চলি। তার জন্য আমি একবার ক্ষমতায় আসতে পারিনি, তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না।
তিনি বলেন, আমার দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, আমার দেশের মানুষের মাথা যেন উঁচু থাকে, সব সময় সেটাই কাজ। আমি এর-ওর কাছে ধরনা দিয়ে বেড়াই না।
নোবেল পুরস্কারের জন্য কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আবার অনেকে লিখেছে নোবেল প্রাইজের জন্য নাকি তার সঙ্গে আমার... আমার সঙ্গে কারো দ্বন্দ্ব নেই। ওই নোবেল প্রাইজের জন্য আমার কোনো আকাঙ্ক্ষাও নেই। আর আমার লবিস্ট রাখার মতো টাকাও নেই, পয়সাও নাই। আর আমি কখনো এটা চাইনি।
তিনি বলেন, হ্যাঁ, পার্বত্য শান্তি চুক্তির জন্য শুধু দেশে-বিদেশে অনেকে লিখেছেন, অনেক নোবেল লরিয়েটও আমার জন্য লিখেছেন। কই আমি তো কখনো তদবির করতে যাইনি, কারো কাছে বলতেও যাইনি। কী পেলাম, না পেলাম ওগুলো আমার মাথার মধ্যেও নেই। আর যিনি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলেন, ব্যাংকের একজন এমডি, তিনি যখন একটা নোবেল প্রাইজ পান, তার সঙ্গে কনটেস্ট করতে যাব কেন?
শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি আমি করেছি। পৃথিবীতে যত শান্তি চুক্তি হয়েছে খুঁজে বের করেন, শান্তি চুক্তি হয়েছে কিন্তু কয়টা অস্ত্রধারী আত্মসমর্পণ করেছে। আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু শান্তি চুক্তি করিনি, এক হাজার ৮০০ জন অস্ত্রধারী ক্যাডার, তারা আমার কাছে অস্ত্র সারেন্ডার করেছে। আমি তাদের সকলকে সামাজিকভাবে, আর্থিকভাবে সাবলম্বী করেছি। ২৪ হাজার শরণার্থী শিবির ছিল ভারতে, তাদের সকলকে ফিরিয়ে এনেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা হওয়ার ফলে আজকে সেখানে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এর আগে কী অবস্থা ছিল? শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম কতজন যেতে পারতেন। এখানে বিদেশে যদি কেউ আমাদের প্রস্তাব দেয়, তো কই আমরা তো ছুটে যাইনি কারো কাছে। আমার কাছে অনেকে এসেছেন, আমি বলেছি, না আমার এই সমস্ত পুরস্কারের দরকার নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেখেছি, এই পুরস্কার আন্তর্জাতিকভাবে যারা পান, এখানে তাদের কতটুকু অবদান সেটা না, এখানে আলাদা একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। কাজেই ওর মধ্যে আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। আর বলে দিল, ওটা নিয়ে আমি নাকি ওনাকে জেলাস (ঈর্ষা) করি।
ড. ইউনূসকে সুবিধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছেন আমার হাত থেকে। ওয়াশিংটনে তার মাইক্রো ক্রেডিটে কেউ আসতে চায় না, আমি গিয়েছি হিলারি ক্লিনটন এসেছেন, কুইন সোফি এসেছেন। আমরা তাকে খুবই প্রমোট করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, উপকারীরে বাঘে খাক, যাতে উপকারটা শিকার করতে না হয়। এটাই তো বাস্তবতা। ওনার পয়সা আছে, উনি লেখাচ্ছেন। কত নোবেল লরিয়েটসহ তাদের যে বিবৃতিটা, এই বিবৃতিটা কী বিবৃতি। এটাতো বিজ্ঞাপন। তিনি যদি এতই পপুলার হন, তার বিজ্ঞাপন দিয়ে এতজনের নাম দিতে হবে কেন? তার জন্য সারা পৃথিবী ঝাঁপিয়ে পড়বে।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলা করছে তার শ্রমিকরা। যখন দাবি পেশ করেছে, প্রমোশন চেয়েছে তাদের চাকরিচ্যুত করেছেন। তারা সবাই মামলা করে দিয়েছে। লেবার কোর্টের মামলায় শাস্তি পেয়েছেন, লেবারদের কি কোনো অধিকার নেই!
শেখ হাসিনা বলেন, যারা এত লেবার নিয়ে কথা বলেন, মানবাধিকারের কথা বলেন, তারা কোথায় এখন, তারা চুপ কেন? তারা কি এই লেবারদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, দাঁড়াননি। লেবারদের ন্যায্য পাওনা একজনে মেরে খাচ্ছেন, চুরি করে খাচ্ছেন, সেটা বলেছেন কখনো? বলেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপ, ইংল্যান্ড, কেউ যদি ট্যাক্স ফাঁকি দেয় সাথে সাথে গ্রেপ্তার করবে, তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিক্রি করে দেবে। এটাই তাদের নিয়ম। সেটা দেখে না কেন? তিনি (ড. ইউনূস) সমানে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবার মামলা করে তার ওপর আদায় করা হচ্ছে। যারা লিখেছেন তারা এই অনুসন্ধানটা একটু করুন।
তিনি আরও বলেন, এই যে বিদেশে এত বিনিয়োগ করে বেড়িয়েছেন, টাকাটা কোথা থেকে এসেছে? কার টাকা, কীভাবে কামাই করেছেন এই টাকা? বিনিয়োগ কীভাবে হলো?
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৪
এমইউএম/এসকে/এমজেএফ